মইনুল হাসানের বিরুদ্ধে ‘কুরআন বিরোধী’ পোস্টার জলঙ্গিতে, এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য

নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই ভোটের প্রচার তুঙ্গে উঠছে। এবার  সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ তথা বর্তমান শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ-সভাপতি মইনুল হাসানের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ল মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি বিধানসভা এলাকায়। ঘটনাটি প্রথম নজরে আসে শনিবার সকালে। এদিন পথচলতি মানুষের চোখে পড়ে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি বিধানসভার ফরিদপুর অঞ্চলের ভাদুরিয়া পাড়া বাজারের কাছে একাধিক গাছে লাগানো পোস্টার। একদিকে মইনুল হাসানের ও অন্যদিকে তৃণমূলের ছবি সম্বলিত ওই পোস্টারে লেখা আছে, ‘মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসকে শেষ করতে হোলি কোরআন এর লেখক মইনুল হাসান ই যথেষ্ট’। আর তার নীচে লেখা আছে, ‘মইনুল হাসান হঠাও তৃণমূল কংগ্রেস বাঁচাও।’ স্বভাবতই ভোটের আগে এই ধরনের পোস্টার বিব্রত করে তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেসকে।

এ ব্যাপারে মইনুল হাসান ‘আপনজন’কে ফোনে বলেন, ‘কুরআন মজিদ আমি তো বটেই সারা পৃথিবীর মানুষে কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানের একটি গ্রন্থ। আমরা এটাকে মাথায় করে রাখি। আমি প্রচুর বই লিখেছি।  কিন্তু এই ধরনের এবং এই নামের কোনও বই আমি কোনওদিন লিখিনি। আমার বিরুদ্ধে এটি একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত। অতীতে হয়েছে। এখন একটা অংশ আবার শুরু করেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। সবার কাছে অনুরোধ করেছি সবাই যেন শান্ত থাকে।

উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদ লোকসভার সিপিআইএম সাংসদ ছিলেন মইনুল হাসান। তার দীর্ঘ সময় পরে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করে সিপিএম। এরপর মইনুল হাসান  শাসক দলে যোগদান করেন। যোগদানের পর  তাকে যোগ্য সম্মান দিয়ে  তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি পদ দেওয়া হয়। এমনকি জেলা স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য নিযুক্ত করেন মমতা। হঠাৎ তার বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। যদিও এখনও পরিষ্কার নয় কে বা কারা মেরেছে এই পোস্টার।

যদিও ব্লক তৃণমূল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, যে এসব বিরোধীদের কাজ। ভোটে হারার ভরে এই ভাবে দলের মধ্য সমস্যা বাধানোর চেষ্টা করছে। এতে কোনো লাভ হবে না বলেও তিনি জানান। জলঙ্গি থানায় বিষয়টা নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে তদন্ত করার জন্য।

তবে কংগ্রেস ব্লক সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা বলেন, এটা ওদের দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, আমাদের নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী,তার নির্দেশে আমরা চলি, এই সব পোস্টার মারা আমাদের কাজ নয়, তারা নিজেরা মেরে বিরোধীদের নাম দিচ্ছে।

অন্যদিকে, জলঙ্গি প্রাক্তন সিপিআইএম বিধায়ক ইউনুস সরকার বলেন,  সাধারণ মানুষ জানেন যে গোটা রাজ্য জুড়ে তাদের গোষ্ঠী কোন্দল চরমে পৌঁছে গেছে সেই জায়গায় জলঙ্গীতে তার ব্যতিক্রম নেই। এখন পর্যন্ত যেখানে ব্লক সভাপতি নিয়োগ করতে পারে না। তার থেকে বোঝা যায় যে কতটা ওদের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দল আছে। আর আমাদের এত অর্থ নেই কে নিজের অর্থ দিয়ে অন্যের প্রচার করবো। এই ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে মুসলিম সমাজ সম্পর্কিত একটি বইয়ে কুরআন নিয়ে মন্তব্য করায় মইনুল হাসানকে নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়। স্থানীয় মানুষজন বলছেন, তার প্রভাব পড়ে ২০০৪ লোকসভা নির্বাচনে। সেই বইয়ে মইনুল হাসানের কুরআন নিয়ে বক্তব্য জনসমাজে প্রচার করে তার বিরুদ্ধে মানুষকে বিরূপ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। তার জেরে নাকি ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মইনুল হাসানকে কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান হোসেনের  কাছে পরাজিত হতে হয়। সেই পুরনো ঘটনাকে ফের জাগিয়ে তুলে মইনুল হাসানের বিরুদ্ধে ফের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। ফের সেই নির্বাচনের প্রাককালে।

Latest articles

Related articles