আম্ফান তার তাণ্ডবলীলায় ভাসিয়ে নিল কৃষক মনের স্বপ্ন

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

received_752748481930252

সালাহউদ্দিন।
স্টাফ রিপোর্টার,খুলনা।
১৫.০৬.২০২০

ঘূর্নীঝড় আম্ফানের লোনা পানিতে ডুবে আছে কৃষক সহ খেটে খাওয়া হাজারো দরিদ্রের আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন।
করোনা নামক এই মহামারিতে যখন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা নতুন পরিকল্পনায় ওলকচু, বিভিন্ন প্রকার মিষ্টিসহিষ্ণু শাকসবজি, আম, পেঁপে, কলা, আউস ধানের বীজতলার মতো বিভিন্ন ফসলে নিজেদের অর্ধ বিদগ্ধ ভাগ্য বদলের স্বপ্নের দিকে হাটছিলেন ঠিক তৎক্ষনাৎ উপকূলবর্তী খুলনা জেলার কয়রা থানা সহ কয়েকটি থানা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবলিলায় ওয়াব্দার বেড়িবাঁধ ভেঙে তার কোল ঘেসে বয়ে চলা কপোতাক্ষ নদীর লবনাক্ত পানিতে তলিয়ে গেল আশাহত সহস্র কৃষকের ক্ষেত। সেই নদীর লবনাক্ত ও বিষাক্ত পানি সরে যাওয়ার আগেই শুরু হয়েছে অতিবৃষ্টি।

কয়রা থানার ০২নম্বর কয়রা গ্রামের দারিদ্রতায় আচ্ছন্ন কৃষক বিধান মণ্ডল বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋন করে প্রায় ০১ বিঘা জমিতে ওল, কচু, হলুদসহ বিভিন্ন প্রকারের শাকসবজি চাষ করেছিলেন। এসকল সবজি বাজারজাতকরনের সময় ও ছিল আসন্ন। বাজারদর ও ছিল বেশভালো। আর এর জন্য তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন চাষকৃত ফসল বিক্রি করে ধারকৃত সকল দেনা পরিশোধ করে কিছু ধান কিনবেন, সন্তানদের পড়াশুনার খরচ যোগাবেন। কিন্তু এরমধ্যে ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ভয়াবহতায় বাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষের বিষাক্ত পানিতে সম্পূর্ণভাবে ভেসে গেছে তার ধারকৃত টাকায় করা ক্ষেত। সাথে সাথে স্বপ্ন গুলো ও যেন তাকে অসহায় জীব ভেবে উপহাস করে গেল।

শুধুমাত্র বিধান মন্ডল না,এভাবে স্বপ্নভঙ্গে অসহায়ত্বের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা ও হতভম্ব হয়ে পড়েছেন খুলনা জেলার দক্ষিণ ভাগের কয়রার চার ইউনিয়নের সহস্র কৃষক। ০২ নম্বর কয়রার বিধানের মতো হাজারো কৃষক বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধে দাঁড়িয়ে লোনা পানির দিকে তাকিয়ে তলিয়ে যাওয়া সবজি ক্ষেত খুজছে আর আফসোসের কান্নায় ফেটে পড়ছে জীবনের বাস্তবতা।

কৃষক বিধান বলেন, ১ বিঘা জমির ক্ষেত করছিলাম।তার মধ্যে প্রায় দশ কাঠার মতো জায়গাজুড়ে দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের ৫০০ খানা ওল, প্রায় ৫০ কেজি কচু ও হলুদ চাষ করছিলাম আর বাকি ১০ কাঠা জমিতে পেঁপে, ঝিঙ্গা, কলা,চিচিঙ্গা, পুঁইশাকসহ আরো বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করেছিলাম। বীজ ক্রয় ও পত্তনি খরচসহ সর্বোমোট খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকার মতো। নদীতে ভেসে যাওয়া ফসল গুলো উঠাতে পারলে লাখ টাকার উপরে বিক্রি হতো।

আবার ০১ নং কয়রা গ্রামের হরিদাস বিশ্বাস দেখাচ্ছিলেন তার বসতবাড়ির সঙ্গে প্রায় ১২ কাঠা চাষী জমিতে লাগানো ওল, কচু, হলুদ, আলু সহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত গত ঘূর্ণিঝড় আইলার তান্ডবে তলিয়ে আছে।

হরিদাস বিশ্বাস বলেন, সারা বছর শাকসবজি,ফলমূল বিক্রি করে সংসার চলে তার। তার প্রায় অর্ধলক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন সে নিঃস্বপ্রায়।

কয়রা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ০৭টি ইউনিয়নে ৬৩৩ হেক্টর জমিতে আউশ বীজতলা, শাকসবজি, কলা,পেঁপে, সূর্যমুখী, তিল, মুগ আম ইত্যাদি ফসল চাষাবাদ করা হয়েছিল । তারমধ্যে ঘূর্নীঝড় আম্ফানের ভয়াল থাবায় ৫৫২ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়েছে। আর ভেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার উত্তর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী, মহারাজপুর, কয়রা সদরসহ ০৪ ইউনিয়নের প্রায় ৩৩শ হেক্টর চাষাবাদি জমি লবনাক্ত পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এতে প্রায় কয়েক কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া চলতি আমন মৌসুমে এই ৩৩শ হেক্টর জমিতে আমন উৎপাদনে ব্যপক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব মোঃ মিজান মাহমুদ বলেন, এ মুহূর্তে লবণ পানি দ্রুত নিষ্কাশন ও প্রচুর বৃষ্টিতে লবণের মাত্রা কমে গেলে পুনরায় ফসল আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমনের বীজতলা তৈরির কথা, লবণ পানি নিষ্কাশন দেরিতে হলে বিকল্প হিসেবে কৃষকদের লবণ সহিষ্ণু জাতের বীজতলা তৈরির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক জনাব পংকজ কান্তি মজুমদার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে আসবে বলে আশা করা যায়। আর এলে কয়রাবাসীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাখা হবে।

নদীর জোয়ার ভাটার আর ভাঙ্গাগড়ার এ ভয়াল নিয়মে অসহায়ের অসহায়ত্ব যেন নতুনরূপে জন্ম নিচ্ছে।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর