Monday, June 9, 2025
30 C
Kolkata

মালদার মানিকচকের তৃণমূল বিধায়কের গাড়িতে হামলার ছক, পিছু ধাওয়া করে বারবার ধাক্কা রহস্যময় এক গাড়ির

Oplus_131072

মালদহ, ২ ফেব্রুয়ারি: পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকদের নিরাপত্তা কতটা সঙ্কটের মুখে, তা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল মানিকচকের তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রের ওপর হামলার ঘটনায়। শনিবার রাতে ইংরেজবাজারের ধরমপুর এলাকায় রহস্যজনকভাবে একটি গাড়ি তাঁর গাড়িকে ধাক্কা মেরে পালানোর চেষ্টা করে। বিধায়কের অভিযোগ, ওই গাড়িটি শুধু ধাক্কা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, বরং ইউটার্ন নিয়ে তাঁর গাড়িকে অনুসরণ করে এবং বারবার ধাক্কা মারার চেষ্টা করে। বিষয়টি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত হামলা বলেই মনে করছেন তিনি।

এই ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ বাস্তবতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। যদি রাজ্যের শাসকদলেরই এক বিধায়ক এই ধরনের প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হন, তবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?

তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নাকি ষড়যন্ত্র?
এই হামলার পিছনে কারা রয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র। তবে সম্প্রতি মালদহ জেলায় তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত জানুয়ারিতেই দুই তৃণমূল নেতা খুন হয়েছেন, যেখানে দলেরই বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, এই হামলার পেছনেও কি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনো যোগ রয়েছে?

সাবিত্রী মিত্র জানিয়েছেন, “কে বা কারা হামলার চেষ্টা করেছে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারব না। তবে ধাক্কা মারার পরও যে গাড়িটি ইউটার্ন নিয়ে পিছু ধাওয়া করেছিল, তাতে বোঝাই যাচ্ছে যে এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়। আমাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেই হামলা চালানো হয়েছে। তাই বিষয়টি দলের রাজ্য সভাপতিকেও জানিয়েছি।”

এই ঘটনা প্রমাণ করছে যে, শুধু বিরোধী দলের নেতারাই নয়, শাসক দলের নেতারাও পশ্চিমবঙ্গে এখন সুরক্ষিত নন। মালদহে একের পর এক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, যেখানে প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। সাধারণ মানুষও প্রতিনিয়ত লুট, ছিনতাই, হত্যা, ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রশাসন কতটা তৎপর?

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কিছুদিন আগেই মালদহ সফরে এসে বলেছিলেন, “এখানকার পলিটিক্স আমিও ঠিক বুঝি না!” মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যই বলে দিচ্ছে, রাজ্যে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ কতটা শিথিল। যদি শাসকদলের বিধায়কই রাস্তায় হামলার শিকার হন, তবে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে?

এই ঘটনার পর মালদহ জেলা পুলিশ বিধায়কের নিরাপত্তা আরও জোরদার করেছে এবং হামলাকারী গাড়িটির খোঁজ চালাচ্ছে। পুলিশের দাবি, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু এটাই কি যথেষ্ট?

সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে, “যদি একজন বিধায়ক প্রাণে বাঁচতে থানায় ফোন করতে বাধ্য হন, তবে আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নেবে?” পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার এই চরম অবনতি কি প্রমাণ করে না যে, প্রশাসন ক্রমশ ব্যর্থতার দিকে এগোচ্ছে?

সরকার যদি অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তবে রাজনৈতিক হিংসা ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বলি হতে হবে আরও অনেককে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতা আরও গভীর সংকটে পড়বে। এখন দেখার বিষয়, এই ঘটনার পর সরকার ও প্রশাসন কতটা কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়।

Hot this week

গাজার রাফাহ সহায়তা কেন্দ্রেই মৃত্যু: ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৭ জন ফিলিস্তিনি

ফের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় রাফাহ শহরের একটি...

মাদ্রাসা রক্ষায় আজমগড়ে সম্মেলন, আদালতের পথে জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দ

উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে আয়োজিত হয় একটি মাদ্রাসা রক্ষা সম্মেলন...

ঈদের আগে উত্তেজনা: গাজিয়াবাদে মুসলিম মাংস বিক্রেতাকে গুলি করার হুমকি বিজেপি বিধায়ক নন্দ কিশোর গুর্জর

উত্তরপ্রদেশর গাজিয়াবাদে বিজেপি বিধায়ক নন্দ কিশোর গুর্জর সম্প্রতি একটি...

টাকার পরিমান দেখে চোখ ধাঁধিয়ে গেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার, গ্রেপ্তার ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস অফিসার

চোখ ধাঁধানো গুপ্তধনের সন্ধান। ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস অফিসার অমিত...

Topics

গাজার রাফাহ সহায়তা কেন্দ্রেই মৃত্যু: ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৭ জন ফিলিস্তিনি

ফের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় রাফাহ শহরের একটি...

মাদ্রাসা রক্ষায় আজমগড়ে সম্মেলন, আদালতের পথে জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দ

উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে আয়োজিত হয় একটি মাদ্রাসা রক্ষা সম্মেলন...

গাজায় ফের ইসরায়েলি হামলা!ধ্বংস করা হল ২৪০টির বেশি ঘর, নিহত হাজার হাজার নিরীহ মানুষ

গত অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ হামলা চালিয়ে আসছে।...

Related Articles

Popular Categories