“ভারতের হাসপাতালে ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার ৩৩ শতাংশ মুসলিম”: অক্সফাম ইন্ডিয়ার সমীক্ষার রিপোর্ট

এনবিটিভি ডেস্কঃ ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে একটি হল সাম্যের অধিকার অর্থাৎ কোন নাগরিককে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, ভাষা এবং রাজ্যের ভিত্তিতে কোন প্রকার ভেদাভেদ চলবেনা। সম্প্রতি অক্সফাম ইন্ডিয়ার সমীক্ষায় উঠে আসে এক চাঞ্চল্যে তথ্য, সমীক্ষায় বলা হয় ভারতে প্রায় ৩৩ শতাংশ মুসলমান হাসপাতালে ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। 

অক্সফাম ইন্ডিয়া সমীক্ষা সংস্থা ভারতে রোগীদের অধিকার সুরক্ষিত করা  শিরোনামে সমীক্ষাটি ২৮টি রাজ্য এবং পাঁচটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিচালিত করে। এই সমীক্ষায় মোট ৩৮৯০ জন অংশ গ্রহন করেন।

অক্সফাম ইন্ডিয়া সমীক্ষার প্রকাশিত তথ্যে বলা হয় যে, ৩৩ শতাংশ মুসলিম উত্তরদাতারা মনে করেন যে, তারা হাসপাতালে তাদের ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এই সমীক্ষায় আরও বলা হয় যে, ২২ শতাংশ উত্তরদাতা তফসিলি উপজাতি, ২১ শতাংশ তফসিলি জাতি এবং ১৫ শতাংশ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে সমীক্ষায় তথ্য উঠে আসে।

https://www.instagram.com/p/CWn3HF3DphT/?utm_source=ig_embed&ig_rid=1afc6f48-491f-4dc2-bf85-569fe6634391

উল্লেখ্য, মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা হয় ১৯৪৮ সালে। সেখানে বলা হয়, সমস্ত মানুষের মৌলিক মর্যাদা এবং সমতার উপর জোর দেওয়া। গত কয়েক দশকে বিশ্বজুড়ে রোগীর অধিকারের ধারণাটি তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রমবর্ধমান ঐক্যমত যে, রোগী চিকিত্সকদের দ্বারা নিশ্চিত করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী আছে। এই ধারণার উপর ভিত্তি করে ২০১৮ সালে অক্সফাম ইন্ডিয়া সমীক্ষা বোর্ড তৈরা হয়। অক্সফ্যাম ইন্ডিয়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কর্তৃক প্রস্তুতকৃত রোগীদের অধিকারের চার্টারটি কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে তা মূল্যায়ন করার জন্য এই সমীক্ষা সংস্থা পর্যবেক্ষণ করে থাকে। এই সমীক্ষার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত।

সমীক্ষার ফলাফলের উদ্ধৃতি দিয়ে অক্সফাম ইন্ডিয়া বলেছে, ভারতীয়দের মধ্যে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন তাদের জাত এবং ধর্মের কারণে স্বাস্থ্য পরিষেবার সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছে।

অক্সফাম ইন্ডিয়ার সিইও অমিতাভ বেহার একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ভারতে রোগীদের মৌলিক অধিকারগুলি নিয়মিতভাবে দরিদ্র এবং মধ্যবিত্তের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলি অস্বীকার করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং রোগীদের মধ্যে শ্রেণী, বর্ণ, ধর্ম এবং লিঙ্গের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় কাঠামোগত বৈষম্যকে আরও গভীর করে তুলেছে।

অক্সফাম ইন্ডিয়ার বৈষম্যে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার প্রধান আনজেলা তানেজা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে বলেন, চিকিৎসা পেশার সঙ্গে যুক্ত সমাজের বাকি অংশের মতো একই পক্ষপাতিত্ব গ্রহণ করে। এবং এই পক্ষপাতগুলি কখনও কখনও রোগীদের সাথে যেভাবে জড়িত তা প্রতিফলিতও  করে। অস্পৃশ্যতা এখনও বাস্তবে দেখা মেলে। সেইজন্য  ডাক্তাররা কখনও কখনও তাদের নাড়ি পরীক্ষা করার জন্য একটি দলিত ব্যক্তির হাত ধরতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে থাকেন। একইভাবে, ডাক্তাররা আদিবাসীদের রোগ এবং চিকিত্সার প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে থাকেন। এই ধরনের ডাক্তাররা বিশ্বাস করেন যে সাধারণ রুগী তথ্য বুঝতে পারে না।

 

তানেজা মহামারীর সময় দিল্লীতে তাবলিগী জামাতের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, করোনা মহামারীর প্রথম দিনগুলিতে তাবলিগী জামাতের অনুষ্ঠান হওয়ার পরে মুসলমানদের লক্ষ্য করে মিথ্যা প্রচারণা চালায়। একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে সেই সময়ে নিন্দিত করা হয়েছিল, যা ছিল চরম অন্যায়।

দিল্লীতে তাবলিগী জামাতের দল ।

Latest articles

Related articles