ভারত জোড়ো কি পারবে বিজেপির গদি কাড়তে?

~হাফিজুর রহমান, আসোসিয়েট এডিটর, এনবিটিভি

ম্যায় আকেলা হি চলা থা জানিবে মঞ্জিল, মগর লোগ সাথ আতে গয়ে ঔর কারমা বনতে গয়া …
মজরুহ সুলতানপুরির লেখা শের টি বহু পুরোনো হলেও প্রাসঙ্গিক। রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রার জন্যই এটি লেখা বলে অনায়াসে চালিয়ে দেওয়া যায়। রাহুল যাত্রা শুরু করেছিলেন একলা আর শেষের মুখে সেই পদযাত্রা জন সমুদ্রের আকার নিয়েছে। শাসক দল ব্যাকফুটে। যাত্রাপথে একের পর এক বাধা, এজেন্সি লেলিয়ে, খবর প্রচার করতে না দিয়ে, কুৎসার বন্যা বইয়ে ও পদযাত্রা রোখা যায়নি। শেষে কোভিড জুজুর মিথ্যার ভয়ে যাত্রা রোখার অপচেষ্টা হয়েছে। পাপ আর পারা চাপা থাকেনা ফুটে বেরোয়, মিথ্যের ভয় দেখানো ব্যর্থ, যাত্রা চলেছে তার নিজস্ব ছন্দে।

কুৎসার জবাব দিয়েছেন রাহুল, ভালোবাসা দিয়ে, নফরতের বাজারে ভালোবাসার দোকান সাজিয়ে। এখন প্রায় শেষের মুখে, ভারত জোড়ো যাত্রা। ইলেট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এত বড় ঘটনা কে ব্ল্যাক আউট করলেও সোশ্যাল মিডিয়া একা একশো হয়ে লড়ে গণতন্ত্রের সম্মান রেখেছে। বিদেশী নিউজ চ্যানেলগুলি খবর করেছে। বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমসে গুরুত্ব দিয়ে খবর ছেপেছে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের মিডিয়ার (হিস মাস্টার্স ভয়েস) আচরণ দেখে গোটা দুনিয়ার অবাক। নিজেদের উপহাসের পাত্র করে তুলেছে দেশের কর্তাভজা গদি মিডিয়া।

রাহুলের যাত্রায় ভীড় দেখে বিরোধীরা খুশি হলেও জনতার কতটা অংশ দেশের ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ভোট দেবে বলা মুস্কিল। আগামী ২৪য়ে লোকসভা নির্বাচন। তার আগেই গোটা দেশের ৯টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। বছর শুরুতে ফেব্রয়ারি/মার্চের ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ডে নির্বাচন দিয়ে। তারপর মে মাসে কর্নাটক। বছর শেষে নভেম্বর ডিসেম্বরে আছে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ আর মিজোরাম। ছত্রিসগড় আর রাজস্থান কংগ্রেস এর দখলে বাকি সাতটি রাজ্য বিজেপি শাসিত। বিজেপির ভয়ের যথেষ্ঠ কারণ আছে। একের পর এক জোট সঙ্গী ছেড়ে গেছে।

কর্নাটক, গোয়া অর মহারাষ্ট্রে কেনা বেচাকরে ক্ষমতায় আসা, বা এজেন্সির জুজু দেখিয়ে সরকার ফেলার গল্প সবাই জানে। নেড়া বেল তলায় বার বার যাবেনা। কাজেই অন্য কৌশল।

বাংলা দিয়ে শুরু করি বিজেপির দখলে ছিল ১৮টি লোকসভা সিট। বাবুলের ছাড়া সিট দখল করেছেন বিহারি বাবু শত্রুঘ্ন সিনহা। বাকি ১৭টি সিটের মধ্যে দার্জিলিং, বনগা আর পুরুলিয়া এই তিনটি ছাড়া সব সিট খোয়াতে চলেছে বিজেপি। কর্নাটক আর মহারাষ্ট্রে একই অবস্থা হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এরপর আছে গোদের উপর বিষফোঁড়া যাত্রার রিয়াকশন। ম্যাজিক ফিগার ২৭২ য়ে পৌঁছতে অনেক পরিশ্রম দরকার। দেখা যাক বিজেপি কি করে অসম্ভব কে সম্ভব করে।
কংগ্রেস ম্যাজিক না দেখাতে পারলেও এবার ভালো ফল করবে বিজেপি জানে। এখন তারা তাকিয়ে তৃণমূলের দিকে। দিদির ইগো তাকে ডুবিয়ে ছাড়ছে। রাহুল যে ভাবে মোদি বিরোধি মুখ হয়ে দাড়িয়েছে সেটি হজম হচ্ছেনা দিদির।
দূর্জনেরা বলছে পিসি ভাইপো এখন বোতল বন্দী। অভিষেকের দিল্লির ইডির দপ্তর থেকে বেরিয়েই রাহুলকে আক্রমণ কিসের ইঙ্গিত বুঝতে বাকি থাকেনা। বিরোধী ঐকের কাঁটা মমতা, কেজরিওয়াল, মায়াবতী, নবীন পট্টনায়ক সবাই। বিজেপিকে হারাতে হলে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দিতে হবে। সেটি যত তাড়াতাড়ি বিরোধিরা বুঝবে ততো ভালো।
আরএসএস এর সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক তলানিতে কারণ আরএসএস ভারত জোড়ো যাত্রার বিরোধিতা করেনি। অমিত শাহ উন্নয়নের কথা এড়িয়ে পয়লা জানুয়ারি ২৪ য়ে রামমন্দিরের দরজা খোলার সংবাদ দিয়েছে। পরিষ্কার বোঝ যাচ্ছে দলটি রাম পাকিস্তান মুসলিমের এজেন্ডায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অন্য দলের মত বিজেপির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব আছে । গুজরাট লবি বনাম বাকিরা।

আরএসএস এর পুরোনো সভ্য মন্ত্রিসভার সবথেকে কাজের লোক নীতিন গাদকারি কে পুরস্কৃত করা দূরের কথা একের পর এক দপ্তর কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এবার বোধহয় টিকিট থেকে বঞ্চিত করা হতে পারে। রাজনাথ সিং ও ব্রাত্য। সবমিলিয়ে স্বস্তিতে নেই বিজেপি। পরপর ৯টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঠিক করে দেবে ঠিক করবে দেশের ভবিষ্যৎ। দেখা যাক শেষ অবধি কি হয়!

Latest articles

Related articles