পঞ্চায়েত ভোটঃ মুর্শিদাবাদের ইসলামপুর থানা পুলিশের অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী

নিজস্ব সংবাদদাতা, মুর্শিদাবাদঃ ঘড়িতে তখন বিকেল ৫ টার কাছাকাছি। হঠাৎ করেই ইসলামপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এসেরপাড়া গ্রামে টহলরত পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়াল চা এর দোকানের সামনে। এরপর হুমকি, ভয় দেখানো, তারপর দোকানে ভেতরে থাকা বসার জায়গা বাঁশের বেঞ্চকে ভেঙে দিল পুলিশ।

সামনে পঞ্চায়েত ভোট, তার আগে এসেরপাড়া গ্রামের শান্তিপ্রিয় মানুষকে এভাবেই হয়রান করে চলেছে পুলিশ। 

গত ৩০ জুন বিকেল ৫ টার দিকে এসেরপাড়া গ্রামের পাকুড়তলা নামে ছোট বাজারে এসে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যস্ত মানুষকে ধমক দিয়ে ভয় দেখিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে পুলিশ বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। এর আগেও এসে একবার একজন বিনাকারণে তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের।

নাম গোপন রাখার শর্তে এক গ্রামবাসী আমাদের প্রতিনিধিকে জানান যে “এসেরপাড়া শুধুমাত্র  রাণীনগর ১ ব্লক নয়, পুরো জেলার মধ্যে অন্যতম শান্তিপ্রিয় গ্রাম। এখানে নির্বাচন নিয়ে কখনও কোনরকম ঝামেলা হয় না। এক চায়ের দোকানে বসে বিভিন্ন দলের প্রার্থী একসাথে বসে চা খান এবং একে অপরের বিল পরিশোধ করেন। এমনকী গ্রামে ঝামেলার কোন ইতিহাসও নেই। তারপরেও পুলিশ কেন এই গ্রামকে টার্গেট করছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।”

আরেক গ্রামবাসী নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন “রাণীনগরের সবচেয়ে শিক্ষিত ও ধনী গ্রাম হচ্ছে এসেরপাড়া। এসেরপাড়ায় রয়েছেন অনেক সফল ব্যবসায়ী, সেই সাথে কঠোর পরিশ্রমী এই গ্রামের মানুষ মাঠে ও বিদেশে কাজ করে গ্রামের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। গাড়ি বাড়ি, সাথে মার্বেলে সুসজ্জিত ৩ তলা মসজিদও রয়েছে এই গ্রামে। কখনোই কোনরকম ঝামেলায় জড়ায় না গ্রামের মানুষ। অথচ ভোট আসলেই পুলিশ অন্যান্য স্পর্শকাতর জায়গা বাদ দিয়ে এসেরপাড়ায় এসে গ্রামবাসীদের মারধর করেন, তুলে নিয়ে যান, ভাংচুর করেন।”

প্রায় ৫০০০ মানুষের এই গ্রামে ৫ টা বাজতেই পুলিশের নিয়মিত ধমকানীর ভয়ে বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন এলাকাবাসী। সেইসাথে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ঈদ উল আযহার আগে যখন পরিযায়ী শ্রমিকরা রাতে বাড়ি ফিরছিলেন তখন তাদের পরিবারের লোকেরা ভয় করছিলেন বিদেশ থেকে ঈদের আনন্দে অংশগ্রহন করতে বাড়ি ফেরার সময় পুলিশ যেন ওদের তুলে না নিয়ে যায়!

গ্রামবাসীদের একটাই অভিযোগ, এসেরপাড়া তো শান্তিপ্রিয় গ্রাম, এখানে না আছে কোন ঝামেলা না আছে কোন রাজনৈতিক হানাহানি, তাহলে কেন পুলিশ এসে ৫ টার সময় বাজার বন্ধ করে দেবে, নিরাপরাধ গ্রামবাসী যারা চা খেতে এসেছে তাদেরকে বেধড়ক পেটাবে, মানুষের কর্মসংস্থানের ক্ষতি করবে!

গ্রামবাসীরা অবিলম্বে পুলিশের অত্যাচার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ দাবী করেছেন। এসেরপাড়া গ্রামবাসীরা যেন নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে পারেন, চলাফেরা করতে পারেন, বাজার করতে গিয়ে পুলিশের হাতে মার না খান সেটা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান এসেরপাড়া গ্রামবাসী।

Latest articles

Related articles