Saturday, February 22, 2025
22 C
Kolkata

“বাঁশ বনের শেয়াল রাজা” : বিদেশী মিডিয়ার কোন কোন প্রশ্নে চাপে মোদীর ছাতি ৫৬” থেকে চুপসে ৩” হয়ে গেল ?

নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক ব্র্যান্ডিংয়ের অন্যতম প্রধান দিক তাঁর কথিত “৫৬ ইঞ্চি বুকের ছাতি”। এটি তাঁর দৃঢ়তা ও ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু বাস্তবে এর চেহারা একটু ভিন্ন। ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে দেশজুড়ে একের পর এক ‘মন কি বাত’ আর একতরফা ভাষণের ঢেউ তুললেও, মোদী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন হাতে গোনা কয়েকবার। মজার বিষয় হলো, সেই ক’বারের মধ্যে তিনটি বড় সাংবাদিক সম্মেলন হয়েছে বিদেশে!

একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক কাঠামোর মূল ভিত্তি হলো মুক্ত ও স্বাধীন মিডিয়া। কিন্তু মোদী সরকার যেন সাংবাদিকদের প্রতি এক অদ্ভুত ‘বিচ্ছিন্নতা নীতি’ অনুসরণ করছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি বিরল উপস্থিতি জানান দেন, অথচ বিদেশ সফরের সময় ঠিকই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। কেন?

একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে যে, ভারতীয় মিডিয়ার সামনে মোদী নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান না। দেশীয় সংবাদমাধ্যমে তিনি যে ধরণের প্রশ্নের মুখে পড়তে পারেন—অর্থনৈতিক বৈষম্য, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অধঃপতন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা—এসব তিনি এড়াতে চান। বিদেশি সংবাদমাধ্যম তুলনামূলকভাবে সংযত থাকে এবং তাঁদের প্রশ্নের ধরনও আলাদা হয়। ফলে মোদী নিশ্চিন্তে নিজের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পরিসরে ‘ব্যবস্থাপিত’ করতে পারেন।

২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মোদীর নীতি ছিল “আমি একাই যথেষ্ট”। তাঁর সরকারের প্রতিটি বড় ঘোষণাই আসে একতরফাভাবে, কখনও টিভি ভাষণে, কখনও টুইটারে। গণতান্ত্রিক কাঠামোর অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো স্বাধীন মিডিয়া এবং জবাবদিহিতা। কিন্তু ভারতের প্রধান সেবক নিজ দেশের মিডিয়ার সামনে এই জবাবদিহিতা দিতে মোটেও আগ্রহী নন।

অন্যদিকে, আমেরিকা বা ইউরোপে সফরের সময় তাঁকে একাধিক সাংবাদিক সম্মেলনে দেখা গেছে, যেখানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিনিয়োগ ও কূটনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে তিনি খোলামেলা আলোচনা করেন। তাঁর এই “নির্বাচিত গণমাধ্যমপ্রীতি” দেখলেই বোঝা যায় যে, তিনি কঠিন প্রশ্ন থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে চান।

মোদীর এই কৌশল নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং একটি পরিকল্পিত প্রচারতন্ত্রের অংশ। মিডিয়ার সামনে কম আসা মানে ভুল করার সম্ভাবনাও কমে যাওয়া। তাঁর সরকার নিশ্চিত করেছে যে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একটি বড় অংশ তাঁর প্রতি অনুগত থাকবে। এর ফলে ভারতীয়দের সামনে তাঁর ইমেজ ‘মজবুত নেতা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তিনি কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার সাহস দেখান না।

যে নেতা “৫৬ ইঞ্চি বুকের ছাতি” বলে নিজের শক্তির পরিচয় দেন, তিনি যদি নিজ দেশের সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়াতে না পারেন, তাহলে তাঁর সেই বুকের ছাতি কতটা সত্যি? গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো জবাবদিহিতা, কিন্তু মোদীর শাসনব্যবস্থায় সেটির স্থান সীমিত। তাঁর মিডিয়া কৌশল প্রমাণ করে যে, তিনি একজন দক্ষ প্রচারক, কিন্তু প্রকৃত গণতান্ত্রিক নেতা নন।

একটি প্রশ্ন থেকেই যায়—যদি ভারতের গণতন্ত্র সত্যিই শক্তিশালী হয়, তাহলে তাঁর মতো একজন জনপ্রিয় নেতাকে কেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে এত এড়িয়ে চলতে হয়?

Hot this week

এবার বিদেশে পারি দিচ্ছে  মালদার কালিয়াচকের কৃতি ছাত্র ড.শেখ সামিম আখতার

সমাজকে ও শিক্ষা জগতকে আরও একবার দেখালো আলোর দিশা...

ভাষায় নেই সীমানাআর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা।

২১-শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য শহীদ...

শুভেন্দুর নামে সমকামীতার বিস্ফোরক অভিযোগ প্রাক্তন অনুগামীর

প্রেম মানে না কোন বয়স। প্রেম মানে না কোন...

লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে ৪০ টি পুরস্কার ক্রয়ের অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে

পশ্চিমবঙ্গ সরকার, সরকারি দপ্তর থেকে শুরু করে সরকারি প্রকল্প...

কর্মরত নার্স, ডাক্তার, এবং পুলিশ কর্মীকে মারধর করে গ্রেপ্তার ওসি

"হিসেবটা ঠিক মিলছে না রে তোপসে"। হেডিং পড়া মাত্রই...

Topics

ভাষায় নেই সীমানাআর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা।

২১-শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য শহীদ...

লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে ৪০ টি পুরস্কার ক্রয়ের অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে

পশ্চিমবঙ্গ সরকার, সরকারি দপ্তর থেকে শুরু করে সরকারি প্রকল্প...

কর্মরত নার্স, ডাক্তার, এবং পুলিশ কর্মীকে মারধর করে গ্রেপ্তার ওসি

"হিসেবটা ঠিক মিলছে না রে তোপসে"। হেডিং পড়া মাত্রই...

Related Articles

Popular Categories