
পশ্চিমবঙ্গে ৩৫টি মুসলিম সম্প্রদায়কে কেন্দ্রীয় ওবিসি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হল।
ভারতে অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত সম্প্রদায় (OBC) নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতীয় অনগ্রসর শ্রেণি কমিশন (NCBC) কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি, পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি মুসলিম সম্প্রদায়—যেমন মুসলিম সর্দার, লস্কর, মোল্লা, সাপুই, বিশ্বাস, নিকারী, খোট্টা, গায়েন ইত্যাদি—কেন্দ্রীয় ওবিসি তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে সেটি কার্যকরও হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
NCBC পশ্চিমবঙ্গের ৩৫টি মুসলিম গোষ্ঠীকে কেন্দ্রীয় ওবিসি তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন থাকার পরও এমন সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হলো বা আইনগত প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এই বাদ পড়ার ফলে উল্লেখিত গোষ্ঠীগুলোর শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা কেন্দ্রীয় সংরক্ষণের সুযোগ হারাতে পারেন।
NEET, JEE (Advanced), পলিটেকনিক, রেলওয়ে, সিএইচএসএল বা সিজিএল-এর মতো কেন্দ্রীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ওবিসি কোটা না পেলে মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐ অংশের উপস্থিতি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অনেকে মনে করছেন, পরিকল্পিতভাবে মুসলিমদের শিক্ষাগত ও পেশাগত অগ্রযাত্রা ব্যাহত করাই এ পদক্ষেপের উদ্দেশ্য।
ঠিক কী কী তথ্যের ভিত্তিতে এই ৩৫টি সম্প্রদায়কে বাদ দেওয়া হলো, তা স্পষ্ট নয়।
যেহেতু বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, আইনি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কমিশন বা সরকারের এমন সিদ্ধান্ত কতটা সাংবিধানিক বা আইনসম্মত, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।
অভিযোগ রয়েছে, সংরক্ষণ থেকে মুসলিমদের বাদ দেওয়ার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে তাদের প্রবেশ সীমিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
যারা ক্ষতিগ্রস্ত বোধ করছেন, তারা চাইলে আইনি পরামর্শ নিয়ে উচ্চতর আদালতে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাতে পারেন।
সরকারি প্রজ্ঞাপন বা বিজ্ঞপ্তি (Gazette Notification) জারি হওয়ার পর, সেটি চ্যালেঞ্জ করে আদালতে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ চাওয়ার সুযোগ থাকে।
রাজ্য ও কেন্দ্রীয় ওবিসি তালিকার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। রাজ্য-স্তরে কেউ ওবিসি তালিকায় থাকলেও কেন্দ্রীয় স্তরে থাকবেন কি না, সেটি নির্ভর করে কেন্দ্রীয় তালিকায় তাদের অন্তর্ভুক্তির ওপর।
তবে এতগুলি মুসলিম সম্প্রদায়কে বাদ দেওয়ার সুপারিশ ও বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক দানা বেঁধেছে। একদিকে আইনগত ভিত্তির প্রশ্ন, অন্যদিকে শিক্ষাগত ও পেশাগত পরিণতি—সব মিলিয়ে এ সিদ্ধান্তকে অনেকেই মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। এই ঘটনা কেবল সংরক্ষণ ব্যবস্থা নয়, সামগ্রিকভাবে ভারতের সামাজিক ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রেও বড় প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।