
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্প্রতি তুরস্কে নির্মিত বায়রাক্তার টিবি-২ (Bayraktar TB2) ড্রোন সংগ্রহ করে দেশটির ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছে। ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো লক্ষ্য করেছে যে এসব ড্রোন গত কয়েক মাস ধরে সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশি অঞ্চলে টহল দিচ্ছে। যদিও ড্রোনগুলো এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সীমানার ভেতরেই সক্রিয় রয়েছে, তবুও এই মোতায়েনকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বায়রাক্তার টিবি-২ ড্রোনের বৈশিষ্ট্য:
তুরস্কের বায়কার কোম্পানির তৈরি এই ড্রোনটি একটি সশস্ত্র ট্যাকটিক্যাল আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকল (UAV)। এতে ড্রোন প্ল্যাটফর্ম, গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন, ডেটা টার্মিনাল ও অন্যান্য অত্যাধুনিক মডিউল যুক্ত রয়েছে। নাগোরনো-কারাবাখ সংঘাতসহ বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধে এই ড্রোনের সক্ষমতা ইতিমধ্যে প্রমাণিত। এটি ভূমি ও আকাশে নিখুঁত লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত ও আক্রমণে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ড্রোনের চলাচল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের এই সক্ষমতাকে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সামরিক সমীকরণে পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সামরিক সম্পর্ক জোরালো হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই মোতায়েন ভারতের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বায়রাক্তার ড্রোনের উপস্থিতি রিপোর্ট করা হয়। সে সময় মেঘালয়ের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারকে সীমান্ত সংলগ্ন পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার শেরা ও শেল্লা অঞ্চলে ড্রোনের উপস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে। ওই এলাকায় বাংলাদেশের সাথে ৪৪৩ কিলোমিটার সীমান্ত থাকায় ভারতীয় এজেন্সিগুলো নজরদারি বাড়িয়ে দেয়।
এই ঘটনাগুলো ঘটেছে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সৃষ্ট অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে। তথাকথিত ছাত্রনেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের মুখে তার সরকারের পতনের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে নতুন করে উত্তাপ লক্ষ্য করা গেছে।
বর্তমানে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী সীমান্তে ড্রোন প্রতিরোধী ব্যবস্থা জোরদার করেছে এবং কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে বর্ডার অঞ্চলে নিয়মিত টহল পরিচালনা করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের ড্রোন মোতায়েন আঞ্চলিক নিরাপত্তা কৌশলে নতুন মাত্রা যোগ করলেও, এখনই এটি সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখা হয়নি। তবে ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে সম্প্রসারিত হয়, তা নিয়ে ভারত সতর্ক রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে দুই দেশের কূটনৈতিক ও সামরিক সংলাপের মাধ্যমে সংযোগ বাড়ানোই হতে পারে উত্তেজনা কমানোর মূল উপায় বলে মত দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।