
নবদম্পতির শেষ ভ্রমণ: হানিমুন রূপ নিল মৃত্যুমিছিলে
নবদম্পতির স্বপ্নময় সফর পরিণত হলো এক রক্তাক্ত দুঃস্বপ্নে। মাত্র ছয় দিন আগে হয়েছিল তাঁদের বিয়ে। সেই আনন্দময় মুহূর্ত উদ্যাপন করতেই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হানিমুনে পাড়ি দিয়েছিলেন কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে। কিন্তু কে জানত, সুখের এই ভ্রমণই হয়ে উঠবে জীবনের শেষ অধ্যায়!
কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারালেন ভারতীয় নৌ-সেনার এক অফিসার ও তাঁর স্ত্রী। নিহত অফিসারের নাম বিনয় নরওয়াল, বয়স মাত্র ২৬। কর্মসূত্রে তিনি নিযুক্ত ছিলেন কেরলের কোচিতে। ছুটি নিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন ভূস্বর্গ কাশ্মীরে, কিন্তু সেখানে ঘটে যায় অকল্পনীয় এক মর্মান্তিক ঘটনা।
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ বৈসরান উপত্যকার কাছে আচমকা জঙ্গিরা তাণ্ডব শুরু করে। তারা উপস্থিত পর্যটকদের নাম ও পরিচয় যাচাই করার পর সুনির্দিষ্টভাবে গুলি চালায়। এই ‘টার্গেট কিলিং’-এর বলি হন বিনয় ও তাঁর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী। ঘটনাস্থলেই দু’জনের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।
এই বর্বরোচিত হামলার পরেই গোটা দেশজুড়ে নেমে আসে শোক ও ক্ষোভের ছায়া। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তৎক্ষণাৎ উপত্যকায় পৌঁছন এবং কড়া বার্তা দেন যে, দোষীদের একটিও রেহাই পাবে না। ইতিমধ্যে TRF নামে পাকিস্তান-ঘনিষ্ঠ জঙ্গি সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
অপরদিকে, সৌদি আরবে কর্মসূত্রে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এই নৃশংসতার খবর পেয়েই তৎপর হয়েছেন এবং দ্রুত দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছেন বলে সূত্রের খবর।

নবদম্পতির এমন করুণ পরিণতি একদিকে যেমন শোকের ছায়া ফেলেছে গোটা দেশে, তেমনই আবার নতুন করে তুলে দিয়েছে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থার দুর্বলতার প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠছে—যেখানে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে হানিমুনে যেতে পারেন না, সেখানে আমরা কতটা নিরাপদ?
কাশ্মীর, যেখানে প্রকৃতি মন কেড়ে নেয়—সেই ভূস্বর্গের বুকে একের পর এক রক্তাক্ত ঘটনা আমাদের বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে, কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, এখানে ছড়িয়ে রয়েছে এক গভীর অন্ধকার, যেখানে স্বপ্নও থেমে যায় গুলির শব্দে।