মহিলা সাহিত্যিককে পদ্মশ্রী ও ভারতরত্ন পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৪৪ লক্ষ টাকার প্রতারণা, গ্রেফতার শাসকদল ঘনিষ্ঠ প্রাথমিক শিক্ষক
মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি থানার শেখপুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মহম্মদ হাসানুজ্জামান (৪২) এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকাকে পদ্মশ্রী ও ভারতরত্ন পুরস্কার পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৪৪ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। অভিযোগকারী জাইনুর বিবি (৬৫) সুতি থানার খাঁপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং নিচুতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা। তিনি সাহিত্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত এবং এলাকায় একজন লেখিকা হিসেবে পরিচিত।
জাইনুর বিবির সঙ্গে হাসানুজ্জামানের পরিচয় হয় প্রায় সাত বছর আগে জঙ্গিপুরের একটি বইমেলায়। সেখানে হাসানুজ্জামান নিজেকে কলকাতার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচয় দিয়ে জাইনুরের আস্থা অর্জন করেন। তিনি জাইনুরকে জানান যে, তার লাগোয়া জেলার তৃনমূল সাংসদ মারফত কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে তার পরিচিতি রয়েছে এবং তিনি নোবেল পুরস্কার পাইয়ে দিতে পারেন। এর বিনিময়ে তিনি জাইনুরের কাছ থেকে বিভিন্ন ধাপে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা নেন।
এরপর হাসানুজ্জামান জাইনুরের দুই ছেলেকে সরকারি চাকরি এবং রেশন ডিলারশিপ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আরও ১৭ লক্ষ টাকা নেন। এছাড়া, ভারতরত্ন, পদ্মশ্রী, বঙ্গভূষণ ও বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তিনি জাইনুরের কাছ থেকে আরও ১২ লক্ষ টাকা আদায় করেন। সব মিলিয়ে প্রতারণার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৪ লক্ষ টাকা।
প্রতিশ্রুত পুরস্কার বা চাকরি না পেয়ে জাইনুর বিবি সন্দেহজনক হয়ে ওঠেন এবং সুতি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ হাসানুজ্জামানকে গ্রেফতার করে এবং জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে হাজির করে। আদালত তাকে ৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার আনন্দ রায় জানান, “এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকাকে ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত করে দেখছে সুতি থানার পুলিশ।”
এলাকায় হাসানুজ্জামানের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা শোনা গেলেও, সুতি বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস বলেন, “তৃণমূলের সঙ্গে হাসানুজ্জামানের কোনও সম্পর্ক নেই।” অন্যদিকে, ব্লক কংগ্রেস সভাপতি মতিউর রহমান জানান, “কংগ্রেসে কখনও দেখিনি অভিযুক্তকে। তৃণমূল ও তার শিক্ষক সংগঠনের নেতা বলেই তাকে এলাকার সবাই চেনে।”
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং পুলিশ পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।