
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫: গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের নজর কেড়েছে গ্রহাণু ২০২৪ ওয়াইআর৪ (2024 YR4)। এই গ্রহাণুটির ২০৩২ সালের ২২ ডিসেম্বর পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষের সম্ভাবনা প্রায় ২% বলে জানিয়েছে নাসা এবং ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ESA) । যদিও এই সম্ভাবনা অত্যন্ত কম, তবুও এটি “টরিনো স্কেল”-এ ৩ নম্বর স্তরে রয়েছে, যা স্থানীয় পর্যায়ে ধ্বংসাত্মক প্রভাবের ইঙ্গিত দেয় ।
গ্রহাণুটির ব্যাস ৪০-৯০ মিটার (১৩০-৩০০ ফুট) এবং এটি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে প্রায় ১৭ কিমি/সেকেন্ড গতিতে । এটি ১৯০৮ সালের টুংগুস্কা ঘটনার জন্য দায়ী গ্রহাণুর চেয়ে বড়, যা সাইবেরিয়ায় ২,১৫০ বর্গকিমি বনাঞ্চল ধ্বংস করেছিল ।
যদি সংঘর্ষ হয়, তবে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণ আমেরিকা, আটলান্টিক, আফ্রিকা বা দক্ষিণ এশিয়ায় আঘাত হানতে পারে । ৯০ মিটার আকারের ক্ষেত্রে এটি একটি শহর ধ্বংস করতে সক্ষম (“সিটি কিলার”) ।
বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা গ্রহাণুটির গতিপথ ও আকার নির্ধারণে ব্যস্ত। নাসা-র জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ মার্চ ২০২৫-এ ইনফ্রারেড পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এর সঠিক আকার নির্ণয় করবে । ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির-র মতে, এপ্রিলের মধ্যে পর্যবেক্ষণ বন্ধ হয়ে গেলে ২০২৮ সাল পর্যন্ত আর তথ্য সংগ্রহ সম্ভব নয় ।
তবে এখন বাঁচার উপায়?
নাসা-র DART মিশনের মতো একটি মহাকাশযান পাঠিয়ে গ্রহাণুটির গতিপথ পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে ।
কিছু বিজ্ঞানী পারমাণবিক বিস্ফোরণের মাধ্যমে একে বিচ্যুত করার প্রস্তাব দিয়েছেন ।
ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সীর-র মতে, পৃথিবীর মাত্র ৫% এলাকায় জনবসতি থাকায় সংঘর্ষের ক্ষয়ক্ষতি কম হতে পারে ।
বিজ্ঞানীদের মতে, সময়ের সাথে পর্যবেক্ষণ বাড়ার সাথে সংঘর্ষের সম্ভাবনা শূন্যে নেমে আসার সম্ভাবনা বেশি। ২০০৪ সালে অ্যাপোফিস গ্রহাণুর ক্ষেত্রেও একই রকম ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, যা পরে বাতিল হয়েছিল ।
ড. লুকা কনভারসি (ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি) বলেছেন “৯৯% সম্ভাবনা রয়েছে যে এটি পৃথিবীকে অতিক্রম করবে(কোনও রকম সংঘর্ষ না করে)। তবে প্রস্তুতি জরুরি” ।
পল চোডাস (নাসা) বলেন “আমাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সম্ভাবনা শূন্যে পৌঁছাবে” ।
১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, গ্রহাণুটি পৃথিবী থেকে ৪.৮ কোটি কিলোমিটার দূরে রয়েছে এবং দ্রুত দূরে সরে যাচ্ছে । নাসা এবং ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি তাদের ব্লগ ও ওয়েবসাইটে নিয়মিত সাম্প্রতিকতম তথ্য প্রকাশ করছে ।
যদিও ২০২৪ ওয়াইআর৪ নিয়ে উদ্বেগের কিছু কারণ রয়েছে, বিজ্ঞানীদের সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষে এটি মোকাবিলা সম্ভব। সাধারণ মানুষের জন্য আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, তবে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তুতির গুরুত্ব আবারও প্রমাণিত হলো।
তথ্যসূত্র: NASA, ESA।