কেতুগ্রাম: মোবাইল ও রিলস তৈরির নেশাই প্রাণ কাড়ল দশম শ্রেণির ছাত্র মহম্মদ ইব্রাহিম চৌধুরী ওরফে দিসানের। সোমবার সকালে কাটোয়া-আমোদপুর রেললাইনের জ্ঞানদাস কাঁদরা স্টেশনে পরিত্যক্ত ট্রেনের কামরায় রিলস বানাতে গিয়ে ২৫ হাজার ভোল্টের ওভারহেড তারে স্পর্শ করে মৃত্যু হলো বছর ১৫-র ওই কিশোরের।
কেতুগ্রামের স্যর আশুতোষ মেমোরিয়াল স্কুলের ছাত্র দিসান এ দিন সকাল সাড়ে সাতটার দিকে দুই বন্ধু রিপু চৌধুরী ও সুজন শেখের সঙ্গে মোটরবাইকে স্টেশনে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, স্টেশনে ফাঁকা প্ল্যাটফর্মে রাখা একটি ট্রেনের ছাদে উঠে মোবাইলে রিলস বানাতে শুরু করে দিসান। মোবাইল হাতে তুলতেই তার হাত ওভারহেড তারে ঠেকে যায়। মুহূর্তে বিদ্যুতায়িত হয়ে ছিটকে পড়ে ট্রেনের ছাদে এবং শরীরে আগুন ধরে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও রেলকর্মীরা ছুটে এসে আগুন নেভালেও দিসানের প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। প্রায় দেড় ঘণ্টা তার দেহ রেলকামরার উপরই পড়ে ছিল। পরে রেলপুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
দিসানের বন্ধু রিপু জানায়, “ওকে বার বার ট্রেনের ছাদে উঠতে মানা করেছিলাম। কিন্তু ও শোনেনি। সেলফি তুলতে গিয়েই এই দুর্ঘটনা ঘটে।” স্টেশনের সাফাইকর্মী কল্যাণ মণ্ডলও জানান, “আমরা ওকে অনেকবার সাবধান করেছিলাম। কিন্তু সে কথা শুনল না।”
দিসানের মা লাভলি বেগম কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “মোবাইল নিয়ে পড়াশোনায় মন দিত না। ওকে অনেকবার নিষেধ করেছি। কিন্তু ও কথা শোনেনি। আজ আমার ছেলেটাই চলে গেল।”
পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দিসানের বাবা সুজন চৌধুরী, যিনি কলকাতার একটি বেকারিতে কাজ করেন, খবর পেয়ে বাড়ি রওনা দিয়েছেন। দুই ভাইবোন ইসমাইল ও রূপসা দাদার অকালমৃত্যুতে শোকে ভেঙে পড়েছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনা স্মার্টফোন ও সামাজিক মাধ্যমের প্রতি কিশোর-কিশোরীদের আসক্তির বিপজ্জনক দিকটি তুলে ধরেছে। প্রশাসন ও অভিভাবকদের উচিত এই বিষয়ে আরও সতর্কতা ও সচেতনতা বাড়ানো।