Tuesday, April 29, 2025
31 C
Kolkata

“মোদের গর্ব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা” সংখ্যার নিরিখে বিশ্ব জুড়ে হিন্দি ভাষাভাষীদের টপকে এগিয়ে গেল বাংলা

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলা ভাষা বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষী সংখ্যার দিক থেকে হিন্দিকে অতিক্রম করেছে। ইউনেস্কো স্বীকৃত বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষে বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি প্রধানত বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মুম্বাই ও দক্ষিণ ভারতে বসবাসরত বাংলাভাষীদের কারণে হয়েছে। এছাড়াও, ইউরোপ, পূর্ব আফ্রিকার সোমালিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশে বসবাসরত বাঙালিদেরও এই পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তবে, ভারতে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারের ক্ষেত্রে হিন্দি এখনও প্রথম স্থানে রয়েছে। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের লিঙ্গুইস্টিক রিসার্চ ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ড. নীলাদ্রিশেখর দাসের মতে, এই তথ্য বাঙালি হিসেবে গর্বের হলেও, এটি অনেক দায়িত্বও বাড়ায়। কারণ, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি এই তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাভাষী নাগরিকদের সম্পর্কে নীতি নির্ধারণ করে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিও এই তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন ওষুধ, প্রযুক্তি ও শিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।

এই তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন সংস্থা তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন ও বিপণন কৌশল নির্ধারণ করে, যা বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর উপর প্রভাব ফেলে। সুতরাং, বাংলা ভাষার এই বৃদ্ধি শুধুমাত্র ভাষার প্রসার নয়, বরং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

বাংলা ভাষা, যা প্রায় ৩০ কোটি মানুষের মাতৃভাষা, চরম হিন্দি আগ্রাসনের মধ্যেও তার স্বতন্ত্রতা ও সমৃদ্ধি বজায় রেখে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ‘এক দেশ, এক ভাষা’ নীতির মাধ্যমে হিন্দি ভাষার প্রচলন বাড়ানোর প্রচেষ্টা বাংলার মানুষের জাতিসত্তা ও ভাষার অধিকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

স্বাধীনতার পর থেকেই হিন্দি ভাষার প্রচলন বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ১৯৩৭ সালে মহাত্মা গান্ধীর সভাপতিত্বে ‘সর্বভারতীয় এক ভাষা ও এক লিপি সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে হিন্দিকে জাতীয় ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা শুরু হয়। এই প্রচেষ্টা বিভিন্ন সময়ে অহিন্দিভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে হিন্দি আগ্রাসনের প্রতিরোধে মানভূম ভাষা আন্দোলন উল্লেখযোগ্য। ১৯৪৮ সালে মানভূম অঞ্চলে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে বাংলাভাষীরা আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনের ফলে মানভূমের বাঙালিরা তাদের মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় সফল হন।

অসমের বরাক উপত্যকায় বাংলাভাষীদের বিরুদ্ধে অসমীয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ১৯৬১ সালে আন্দোলন শুরু হয়। শিলচরে পুলিশের গুলিতে ১১ জন বাংলাভাষী শহীদ হন, যা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এই আন্দোলনের ফলে অসম সরকার বরাক উপত্যকায় বাংলাকে সরকারী ভাষা হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।

বর্তমানে, বাংলা ভাষা তার সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করেছে। বাংলা ভাষার এই সাফল্য হিন্দি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাভাষীদের দৃঢ় প্রতিরোধ ও মাতৃভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসার ফল। এই সাফল্য আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় অনুপ্রেরণা জোগায়।

Hot this week

তাজমহলের ছায়ায় বিরিয়ানি বিক্রেতা খুন: পেহেলগাঁও হামলার বদলা দাবি, গ্রেফতার ৩

আগ্রার তাজগঞ্জ এলাকায় ২১ বছরের এক বিরিয়ানি বিক্রেতা গুলিতে...

৪৮টি পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ করলো ‘ওমর’ সরকার,তাহলে কি আবারও নাশকতার ছক? উঠছে প্রশ্ন

রাজ্য সরকারের নির্দেশে এবার কাশ্মীরে ৪৮টি পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ...

মসজিদ-মাদ্রাসা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে প্রশাসন, ‘বেআইনি নির্মাণ’-এর আড়ালে নয়া প্রবণতা?

সম্প্রতি দেশে মসজিদ ও মাদ্রাসা ভাঙার ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে,...

Topics

তাজমহলের ছায়ায় বিরিয়ানি বিক্রেতা খুন: পেহেলগাঁও হামলার বদলা দাবি, গ্রেফতার ৩

আগ্রার তাজগঞ্জ এলাকায় ২১ বছরের এক বিরিয়ানি বিক্রেতা গুলিতে...

৪৮টি পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ করলো ‘ওমর’ সরকার,তাহলে কি আবারও নাশকতার ছক? উঠছে প্রশ্ন

রাজ্য সরকারের নির্দেশে এবার কাশ্মীরে ৪৮টি পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ...

নিজের মূত্র পান করে আঘাত সারানোর অদ্ভুত দাবী বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলিউড অভিনেতা পরেশ রাওয়ালের!

বলিউডের প্রবীণ অভিনেতা পৌর পরেশ রাওয়াল সম্প্রতি একটি অদ্ভুত উপায়ে...

বাগদা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি পাচারকারী নিহত, সীমান্তে চরম উত্তেজনা

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্তে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে।...

Related Articles

Popular Categories