কলকাতার নিউ টাউনে ১৪ বছর বয়সী নাবালিকার নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যা: প্রশ্নের মুখে নারী সুরক্ষায় রাজ্য সরকারের ভূমিকায়
কলকাতার নিউ টাউন থানা এলাকায় এক মর্মান্তিক ঘটনায় উত্তাল গোটা বাংলা। গৌরঙ্গনগরের এক ১৪ বছর বয়সী স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে তার নিজের বাড়ি থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে একটি খালের পাশের ঝোপে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত ও ময়নাতদন্তে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যার প্রমাণ মিলেছে ।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে তর্কের জেরে বাড়ি ছেড়ে যায় মেয়েটি। ছোট বোনকে মারার অভিযোগে মা তাকে বকাঝকা করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। শেষে মা তাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। এরপর মেয়েটি একটি চিঠি লিখে যায়, চিঠিতে লেখা ছিল, “তুমি আমাকে বেরিয়ে যেতে বলেছো, তাই চলে যাচ্ছি” ।
রাত ১০টার দিকে বাড়ি ছাড়লেও মেয়েটি আর ফেরেনি। পরিবার ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে সারারাত খোঁজাখুঁজি চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে ভোর ৪:৩০টায় নিউ টাউন থানায় নিখোঁজ রিপোর্ট করে পরিবার। শুক্রবার সকাল ৬:৩০টায় খালের পাশে অর্ধনগ্ন দেহ দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে জানায়। দেহে একাধিক আঁচড়, শ্বাসরোধের চিহ্ন ও যৌন নির্যাতনের প্রমাণ মেলে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, মেয়েটি জগতপুর এলাকায় একজন বাইকারের সঙ্গে কথা বলছে। বাইকারটি তাকে নিয়ে অন্ধকার এলাকায় প্রবেশ করে, যেখান থেকে তার আর সূত্র মেলেনি ।
পুলিশ সন্দেহ করছে, এই বাইকারই তাকে জোরপূর্বক নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও হত্যা করেছে। অপরাধস্থানটি অন্ধকারময় এবং অপরাধপ্রবণ এলাকা বলে স্থানীয়দের বক্তব্য।
ময়নাতদন্তে শারীরিক আঘাত ও ড্রাগ ব্যবহারের সম্ভাবনাও উঠে এসেছে ।
এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান প্রবণতারই প্রতিচ্ছবি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার দ্রুত বিচারের দাবি করলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্ষণ ও হত্যার মামলাগুলোয় বিচারিক বিলম্ব এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে ।
এই মামলায় পকসো আইনের দুটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে । গত জানুয়ারিতেই হুগলির গুড়াপে এক ৫ বছর বয়সী মেয়ের হত্যাকারীকে ৫৪ দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল । তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মামলাগুলো দীর্ঘসূত্রিতায় ভোগে।
বিজেপি নেতা শেজাদ পুনাওয়ালা অভিযোগ করেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে ধর্ষকরাই নিরাপদ, নারীরা নয়” ।
খালের পাশের রাস্তা যেখানে দেহ পাওয়া গেছে, সেখানে পর্যাপ্ত আলো নেই এবং মাদকসেবী ও অপরাধীরা ঘোরাফেরা করে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন ।
মেয়েটির মা বিধাননগর হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, “ওকে নির্মমভাবে মেরেছে কেউ। আমি শুধু ন্যায়বিচার চাই” । বাবা মুম্বাইয়ে কর্মরত থাকায়, মা একাই লড়াই করছেন মেয়ের হত্যার বিচার পেতে।
নিউ টাউনের এই ঘটনা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, এটি সমাজ ও প্রশাসনের চরম ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার যদি নারী সুরক্ষায় কঠোর নীতি ও দ্রুত বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে, তবে এমন মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি অব্যাহত থাকবে। মুখ্যমন্ত্রীর “নারীর নিরাপত্তা” বিষয়ক বক্তব্যের বিপরীতে প্রতিটি নতুন ঘটনা প্রশ্ন তুলছে রাজ্যের প্রকৃত অগ্রগতি নিয়ে।