রাসুল সা. তার শত ব্যস্ততার ভিতরও প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা আল্লাহর ইবাদতে কাটাতেন। তিনি পেয়েছিলেন শান্তিময় জীবন। তার প্রচারিত আদর্শের নামও শান্তি।
এবার আমরা কয়েকজন সম্পদশালী ও খ্যাতিমান মানুষের কষ্টের জীবন নিয়ে আলোচনা করবো।
পুরো নাম সুশান্ত সিং রাজপুত । এমনিতেই সুশান্ত শব্দটি শ্রƒতিমধুর সাথে ধর্মীয় ও রাজকীয় উপাধি মিলে এক কথায় বর্ণঢ্য । মাত্র ৩৪ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে সে ১২টি ছবি এবং ৪টি টিভি-সিরিয়াল করে। সেগুলো থেকেই সে প্রায় ৬০ কোটি রুপি আয় করে। তার দৃশ্যমান পাঁচজন গার্লফ্রেন্ড ছিলো । ছিল চাঁদে কেনা একটুকরো জমিও । কিন্তু ছিল না ছোট্ট একটি শব্দ শান্তি।
বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু নিয়ে মুম্বাই পুলিশকে দেয়া ভাষ্যে তারই দুই চিকিৎসক জানিয়েছেন, সুশান্ত ‘বাইপোলার ডিজ-অর্ডারে’ ভুগছিলো। সঙ্গে ছিল অসম্ভব দুশ্চিন্তা-অনিদ্রাসহ একগুচ্ছ মানসিক অসুখ। তারা আরোও জানিয়েছে, সুশান্ত ওষুধ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছিলো এবং বলতো তার সমস্যার সমাধান কোনো দিনই হবে না।
‘বেঁচে থাকার ইচ্ছা নেই’ চিকিৎসকদের এটিও জানিয়েছিলো সুশান্ত ।
শুধু সুশান্ত নয় গত ১০ বছরে ১২জন বলিউড ফিল্মস্টার আত্বহত্যা করেন। ঢালিউডে কিছুটা কম হলেও হলিউডে নিজকে হত্যার হার আরও ভয়াবহ।
এরও আগে পপবিশ্বের রাজপুত্রখ্যাত মাইকেল জ্যাকসন মাত্র হাফ সেঞ্চুরিতে(৫১) এবং তার শ্বশুর এলভিস প্রিসলী (৪২) নিজেদের মৃত্যুর সিমান্তে নিয়ে যান প্রচুর ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে ।
খ্যাতির মোহে জ্যাকসন প্রায় শতবার নিজের চেহারায় প্লাস্টিক সার্জারি করেন। এলভিস প্রিসলি ২০মাসে প্রায় ১২,০০০ ব্যাথানাশক পিল সেবন করেন। দুরবর্তী কোথাও গেলে ঔষধের একটি সুটকেস তার সাথে থাকতোই।
কিন্তু সম্পদ কিংবা খ্যাতির মোহ নয় আসলে তাদের শান্তি দিতে পারতো প্রার্থনা আর প্রার্থনা ।
আর্নেষ্ট হেমিংওয়ে (১৮৯৯ – ১৯৬১) সাগরের সাথে এক বৃদ্ধের সংগ্রামীর বিজয়ের কাহিনী নিয়ে তার বিখ্যাত বই ‘দ্যা ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী’ লিখে পৃথিবীর শীর্ষ দুই পুরস্কার পুলিৎজার ও নোবেল প্রাইজ পান, কিন্তু মাত্র ৭ বছরের মাথায়ই আত্মœহত্যা করে সবাইকে হতাশ করেন।
জাপানের প্রথম নোবেল পাওয়া সাহিত্যিক আর্নেষ্ট হেমিংওয়ের মতো একই বছরে জন্ম নেয়া ইয়াসোনারি কাওয়াবাতা (১৮৯৯ – ১৯৭২) পুরস্কার প্রাপ্তির মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় আত্মœহত্যা করেন।
মাইকেল এইচ র্হ্টা তার ১০ বছরব্যাপী গবেষণালব্ধ বই দ্য হান্ড্রেড এ বলেন, মুহাম্মদই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ কারন, তিনি জাগতিক ও পারলৈকিক উভয় জগতেই চুড়ান্তভাবে সফল হয়েছেন।
বিশ্বের এই শ্রেষ্ঠমানব নবী রাসুল সা. এর জীবনে আমরা দেখতে পাই কী কঠিন পরিস্থিতি কত সহজভাবে তিনি ম্যানেজ করেছেন। এমনকি বদরযুদ্ধের সেই কঠিন মুহুর্তেও; যখন তিনগুন বিশাল কাফের সৈন্যরা হামলে পড়েছে দুনিয়ার বুক থেকে তাদের চিরতরে মুছে দিতে।
রাসুল সা. মুসলিমদের যুদ্ধের ময়দানে রেখেই আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় বসে গেলেন। আল্লাহপাক তাকে দিলেন চুড়ান্ত বিজয়।
রাসুল সা. এর এই চুড়ান্ত সাফল্যের পিছনে অন্যতম কারণ হিসেবে পাওয়া যায় তার প্রার্থনার শক্তি। এমনকি বৈজ্ঞানিক থেকে রাজনীতিবিদ সবাই সাফল্যের জন্য এই প্রার্থনার শক্তিকে কাজে লাগিয়েছেন।
মুহাম্মদ সা. এর জীবৎকালের শেষভাগে মদিনা সমৃদ্ধ হয়েছিল। প্রত্যেক জায়গাতেই স্বর্ণ ও রৌপ্যরাজি পাওয়া যেত পর্যাপ্ত পরিমাণে। এই সমৃদ্ধির দিনেও আরবের এই অধিপতির পর্ণকুটিরে সপ্তাহের পর সপ্তাহ আগুন জ্বলেনি; এ সময় তাঁর খাদ্য ছিল দুটি জিনিস খেজুর ও পানি। তার পরিবার দিনের পর দিন না খেয়ে কাটিয়েছে। কারণ তাঁর ঘরে খাবার বলতে কিছু ছিল না। তিনি কোন কোমল বিছানায় রাত যাপন করেননি।
দিনের ব্যস্ততার পরে রাতে খেজুরের মাদুরে শুতেন আর বেশিরভাগ রাতই কাটাতেন ইবাদাতে। তাঁর স্রষ্টার কাছে ইবাদাতকালে হঠাৎ তিনি অঝোরে কেঁদে উঠতেন আর বুকের ভিতর থেকে এমন আওয়াজ বের হতো যেন ডেকচির ভিতর পানি ফুটানো হচ্ছে।
তাঁর জীবন সায়াহ্নে একমাত্র সম্পদ ছিল কয়েকটি মুদ্রা যার কিছু অংশ দিয়ে তাঁর দেনা শোধ করেছিলেন এবং বাকি অংশ তার দ্বারে আগত এক অভাবী লোককে দেয়া হয়েছিল। যে কাপড় পরিধানে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন তাতে ছিল অনেক জোড়াতালি। যে ঘরটি থেকে সারা বিশ্বে আলো ছড়িয়ে গেছে সে ঘরটিই ছিল সেদিন অন্ধকার। কারণ তাঁর ঘরের বাতিতে তেল ছিল না।
আকাশের মতো বিশাল বিশ্বাসের সামিয়ানা তিনি তৈরী করেছিলেন। সাগরের মতোই ভালোবাসার উচ্ছাস তিনি মানবতাকে দিয়েছিলেন।
প্রশান্তি চাইলে সেই সামিয়ানায় আশ্রয় এবং সেই সাগরে অবগাহন করতে হবে।
কত শুদ্ধতম ব্যক্তি ছিলেন তিনি ! তাঁর তুলনায় পৃথিবীতে আর কেউ আছে কী?