
কাশ্মীরের পাহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত সরকার পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা পরিষেবা স্থগিত করেছে এবং ভারত ছাড়ার নির্দেশ জারি করেছে। চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য এই সময়সীমা ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এই আবহে ভারত সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের হায়দরাবাদ শহরের এক পিতা। তার দুই শিশু সন্তান, যাদের বয়স নয় ও সাত বছর, জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত এবং তাদের জীবনরক্ষাকারী অস্ত্রোপচার আগামী সপ্তাহেই নির্ধারিত। চিকিৎসা চলছে দিল্লির একটি উন্নত মানের হাসপাতালে। পিতা জানিয়েছেন, চিকিৎসা, ভ্রমণ ও থাকার খরচ মিলে ইতোমধ্যেই প্রায় ১ কোটি রুপি ব্যয় করেছেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে পুলিশ ও বিদেশ মন্ত্রকের চাপের মুখে পড়ে তাদের দিল্লি ছাড়তে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, “ভারতীয় হাসপাতাল ও চিকিৎসকরা আমাদের পাশে রয়েছেন, কিন্তু প্রশাসনিক চাপ বেড়েই চলেছে। আমি দুই দেশের সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই—আমার সন্তানদের চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ভারতে থাকতে দেওয়া হোক।”
কাশ্মীর হামলার জেরে ভারত শুধু ভিসা পরিষেবা স্থগিত করেই থেমে থাকেনি, পাশাপাশি SAARC ভিসা ছাড়, ইন্দুস জলচুক্তি এবং দিল্লিস্থ পাকিস্তানি হাই কমিশনের সদস্যদের দেশে ফেরত পাঠানোর মতো বড় কূটনৈতিক সিদ্ধান্তও নিয়েছে। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ পাকিস্তানও ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করেছে এবং ভারতীয় কূটনৈতিকদের তাড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
এই অস্থিরতার মধ্যেই ভারতে অবস্থানরত বহু পাকিস্তানি নাগরিক ও পাকিস্তানে থাকা ভারতীয় নাগরিকরা নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন। একদিকে যেমন চিকিৎসারত শিশুদের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে, অন্যদিকে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা পাকিস্তানি হিন্দু পরিবারগুলিও সীমান্তে এসে দাঁড়াচ্ছে বাতিল হওয়া ভিসার সামনে।
পাহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিল সংঘটিত জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তান ভিত্তিক নিষিদ্ধ লস্কর-ই-তৈয়বার ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF)। হামলার অভিঘাতে দু’দেশের মধ্যকার মানবিক সম্পর্কও এখন প্রশ্নের মুখে। এই সংকটকালে সেই পিতার আর্তি যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে—রাজনৈতিক বৈরিতার ঊর্ধ্বে উঠে অন্তত শিশুদের জীবন বাঁচানোর সুযোগ দেওয়া হোক।