সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এর গলায় দড়ি পরাতে নতুন আইন!

~হাফিজুর রহমান, আসোসিয়েট এডিটর, এনবিটিভি

এ মাসের ১০ তারিখে প্রকাশিত হয় একটি লেখা, সহজবোধ্য করে লেখাটিতে তথ্য প্রমাণ দিয়ে দেখাবার চেষ্টা করেছিলাম বিজেপির পক্ষে আবার ক্ষমতায় ফেরা কেন সহজ হবেনা। খবরটা বের হওয়ার পর দেখলাম পাঠক সংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে। এ অভিজ্ঞতা এই প্রথম। শাহরুখ, দিলীপকুমার বা মোহাম্মদ রফির উপর লেখার পাঠক অনেক বেশী হলেও রাজনৈতিক লেখার পাঠক আছে। এর আগে সর্বভারতীয় ইংরেজি বাংলা কাগজে লিখেছি এরকম অভিজ্ঞতা হয়নি। তাই সাময়িক ভাবে লেখায় বিরতি নিয়েছিলাম।
কাল দিল্লি থেকে আসা একটি ফোন সব পাল্টে দিল, তাই কলম ধরতে বাধ্য হলাম। ফোনটি করেছিল রাজধানীর এক নামী দৈনিকের সাংবাদিক। যা শুনলাম তাতে মাথায় বাজ পড়লো। জানলাম ১৩ তারিখে কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার দপ্তর একটি খসড়া তৈরী করেছে তাতে PIB বা প্রেস ইনরমেশন বুরো ওয়াচ ডগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চলেছে। খবরের উপর সেনসর তো বটেই কোনো খবর বদল বা বাতিল করার অধিকার তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। অর্থাৎ যে খবর দেশের শাসকদের নাপসন্দ সেটি দিনের আলোর মুখ দেখবে না। উদ্দেশ্য পরিষ্কার। আসল মতলব বেয়াড়া সোশ্যাল মিডিয়ার গলায় দড়ি পরানো। এর আগে PIB চিন ভারতে অনুপ্রবেশের খবর ভুল বলে, পরে ডিফেন্স এর সার্কুলারে তারা ভুল প্রমাণিত হয়।

আসলে শাসক দলের ধামা ধরা ছাড়া PIB-র কোনও কাজ নেই। রাহুল গান্ধীর তিন হাজার কিলোমিটার ভারত জোড়ো যাত্রা না দেখালেও প্রধানমন্ত্রীর তিনশ মিটার মোটর যাত্রার খবর পরিবেশনে এক পায়ে খাড়া। এত মোটা দাগের কান্ড কারখানা গদি মিডিয়ার পক্ষেই সম্ভব। সোশ্যাল মিডিয়া যথারীতি চতুর্থ স্তম্ভের কাজ অর্থাৎ সমালোচনা করেছে। ভারতজোড়ো যাত্রা বিজেপির মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গদি মিডিয়া কন্ট্রোলে এলেও বেয়াড়া সোশ্যাল মিডিয়ার অনামী সাংবাদিকেরা গদি মিডিয়ার কাপড় খুলে নিচ্ছে, অপ্রিয় সত্যি তুলে ধরে বারবার শাসক দলকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। করোনার জুজু দেখিয়ে রাহুলকে দিল্লী থেকে দূরে রাখতে পার্লামেন্টে মাস্ক পড়ার নাটক আর রাতে মাস্ক খুলে বিয়ে বাড়ি যাওয়ার কিসসা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে শাসক দলের দ্বিচারিতা সামনে এনেছে সোশ্যাল মিডিয়া ।
এই বেইজ্জতির বদল নিতেই তড়িঘড়ি করে এই ব্যবস্থা। প্রতিবাদ করেছে এডিটরস গিল্ড। প্রতিবাদ করেছে কংগ্রেসও। গদি মিডিয়া শাসক দলের উচ্ছিষ্ট হাড় মাংস খেয়ে গায়েগতরে বেড়ে চলুক আর সোশ্যাল মিডিয়া রক্ত শূণ্যতায় ধুঁকতে থাকুক। হাতে না মেরে ভাতে মারার কি চমৎকার উপায়। এতেও পোষ না মানলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেল জরিমানা তো ডাল ভাত, প্রয়োজনে দেশদ্রোহী ছাপ মেরে দাগিয়ে দেওয়া বা কম্পিউটার হ্যাক করে ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে। তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী গুলি মারো শালোকো আর প্রেস ইনফরমেশন বুরো ওয়াচ ডগ হবে। এটা বছর শুরুর উপহার!
ইমারজেন্সির কথা কে বা কারা বার বার বলে ! দেশ জুড়ে যা চলছে সেটার নাম কি? জানতে ইচ্ছে করছে।
আমরা ছোট হলেও চিন্তা চেতনায় কারো থেকে পিছিয়ে নেই। প্রমাণ এই লেখা। একটা উদহারন দিচ্ছি, কোনও কাগজে বেরোয়নি এই খবর, আপনাদের সামনে আনছি। ইলেক্টোরাল বন্ডের ৫৮% দান গেছে শাসক দলের কাছে। দ্বিতীয় স্থানে আছে তৃণমূল, আর কংগ্রেস তৃতীয় স্থানে। কে কত পেয়েছে তাও জানি। কিন্তু এধরনের খবর যাতে প্রচার না হয় সে জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার গলায় চেন পরানোর আয়োজন। ঢাল তলোয়ার ছাড়া অসম যুদ্ধ চালাচ্ছি আমরা। পাশে থাকুন, উৎসাহ দিন প্রয়োজনে সমালোচনা করুন। কতদিন এ ভাবে চলবে জানিনা। যতদিন চলবে মাথা উঁচু করে কলম চালিয়ে যাবো। কথা দিলাম।

Latest articles

Related articles