
গাজার খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ১১ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে তিনটি শিশুও রয়েছে। শনিবার স্থানীয় নাগরিক সুরক্ষা সংস্থা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। হামলাটি গত রাত ভোর ৩টার দিকে দক্ষিণ গাজার আল-বায়রাম পরিবারের বাড়িতে ঘটে। নিহতদের মধ্যে ৮ জন একই পরিবারের সদস্য বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। মৃত শিশুদের মধ্যে রয়েছে এক বছর বয়সী এক ছেলে ও মেয়ে এবং মাত্র এক মাসের একটি নবজাতক। ইসরাইলি সেনাবাহিনী এখনও এই হামলার বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান গত ১৮ মার্চ আবারও তীব্র হয়, হামাসের সঙ্গে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জেরে এই যুদ্ধের সূত্রপাত। শুধু গত শুক্রবার গাজাজুড়ে ইসরাইলি হামলায় ৪২ জন নিহত হন। এর আগে, ২ মার্চ থেকে গাজায় পূর্ণাঙ্গ অবরোধ জারি করে ইসরাইল, যার ফলে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানিসহ মানবিক সহায়তা বন্ধ রয়েছে। ইসরাইলের দাবি, হামাস সাহায্য সরবরাহ আটকাচ্ছে এবং বন্দি মুক্তির চাপ তৈরিতে এই পদক্ষেপ। তবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অবরোধ প্রত্যাহার ও জরুরি সহায়তা চালুর আহ্বান জানিয়েছে, কারণ গাজায় দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয় “অভূতপূর্ব স্তরে” পৌঁছেছে।

আক্রান্ত আল-বায়রাম পরিবারের বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হওয়ার পর উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে লাশ উদ্ধার করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, হামলার কোনো পূর্বসূচনা না থাকায় পরিবারটি নিরাপদ স্থানে যেতে পারেনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ইসরাইলি হামলায় ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন, যার অর্ধেকই নারী ও শিশু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সতর্ক করেছে, গাজা অবরোধের কারণে গাজায় চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পুর্ণ অচল হয়ে পড়েছে, রোগীরা জীবনরক্ষাকারী ওষুধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় নিয়ে আলোচনা চললেও এখনও কোনো সমাধান আসেনি। আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন দেশ চাপ দেওয়া সত্ত্বেও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু “হামাসের সম্পূর্ণ উৎখাত” না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করেছেন। গাজাবাসীর মতে, এই যুদ্ধ এখন শুধু রাজনৈতিক লড়াই নয়, বেঁচে থাকার যুদ্ধ, পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধ।