
অপারেশন সিঁদুরে ব্যবহৃত ভারতীয় বায়ুসেনার অন্যতম আধুনিক সুখোই-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমানের চাকা এবার জায়গা পেল একেবারে ভিন্ন পরিসরে—জগন্নাথদেবের রথে। কলকাতার ইসকন রথযাত্রায় এই বছর রথটি চলবে ভারতীয় সেনার গর্ব সুখোই যুদ্ধবিমানের চাকার উপর ভর করে। যুদ্ধ ও আকাশচুম্বী প্রযুক্তির গন্ধ মিশে যাচ্ছে এবার ঈশ্বর আর ঐতিহ্যের রথযাত্রার সঙ্গে।
জানা যাচ্ছে, রথযাত্রার আগে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে রথটি সফলভাবে ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে এই নতুন চাকার উপর ভর দিয়েই। ইসকন কলকাতার ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস জানালেন, “আমরা এই চাকা এনেছি কোনও বাহাদুরি দেখানোর জন্য নয়। একান্তই এটি ঈশ্বরের ইচ্ছার ফল। তিনিই পথ দেখিয়েছেন, আমরা শুধু অনুসরণ করেছি।”
এই সুপারসনিক যুদ্ধবিমান সুখোই, যা শত্রু নিধনে ভারতের বায়ুসেনার অন্যতম ভরসা, তা ইতিমধ্যেই ইতিহাস সৃষ্টি করেছে পহেলগাঁও হামলার বদলা নেওয়া ‘অপারেশন সিঁদুরে’ অংশগ্রহণ করে। ঠিক সেই বিমানেই ব্যবহৃত চারটি চাকাই এবার ঠাঁই পেয়েছে রথে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে ২৭ জুন, আর সেদিন শহরজুড়ে জগন্নাথ দেবকে বহন করবে এই উচ্চপ্রযুক্তির চাকা।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৪৮ বছর আগে এক রথযাত্রায় মাঝপথে রথের চাকা ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। সেই সময় জগন্নাথদেবকে মাসির বাড়ি গাড়িতে করে নিয়ে যেতে হয়েছিল। তার পর থেকেই রথে আরও শক্তিশালী চাকার খোঁজ শুরু হয়। বহু বছর ধরে ব্যবহার হয় বোয়িং ৭৪৭ বিমানের জন্য ব্যবহৃত চাকা, যা তৈরি করত ডানলপ। এই চাকা প্রায় পাঁচ দশক নির্ভরযোগ্যভাবে রথযাত্রায় ব্যবহৃত হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটির উপরেও ক্ষয়ের ছাপ পড়ে, ফলে নতুন কোনও বিকল্পের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
সেই খোঁজে, ইসকন যোগাযোগ করে এমআরএফ-এর সঙ্গে, যারা ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য সুখোই যুদ্ধবিমানের চাকা সরবরাহ করে থাকে। এমআরএফ-এর তরফে প্রথমে বিস্ময় প্রকাশ করা হলেও, পরে তারা নিশ্চিত করে যে এই চাকা রথের ওজন সহ্য করতে পারবে অনায়াসেই। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছে চারটি চাকা কেনা হয়, যার মোট মূল্য ছিল প্রায় ১.৮০ লক্ষ টাকা।
এই ঘটনা নিঃসন্দেহে রথযাত্রার ইতিহাসে এক অভিনব সংযোজন। যেখানে সামরিক শক্তি, প্রযুক্তিগত নির্ভরতা এবং ধর্মীয় বিশ্বাস এক অভূতপূর্ব রূপে একত্রিত হয়েছে। রথযাত্রার ভক্তদের জন্য এটি যেমন গর্বের বিষয়, তেমনি প্রযুক্তির অগ্রগতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবেও ধরা দেওয়া যায় এই পদক্ষেপকে।