
কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হানার ঠিক পনেরো দিনের মাথায় ভারতীয় সেনার পাল্টা প্রত্যাঘাতে গোটা দেশ যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে, সেই সময় মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে বসে এক মহিলা আকাশপানে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন—”আমার স্বামীকে যারা খুন করল, তারা কোথায়?”
ওই মহিলার নাম জ়েনিফার নাথানিয়াল। পেশায় এলআইসি-র কর্মী সুশীল নাথানিয়ালের স্ত্রী। গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গিদের গুলিতে সুশীলের মৃত্যু হয় স্ত্রীর এবং মেয়ের চোখের সামনে। ঘটনাস্থলে সেদিন প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৫ জন নিরীহ পর্যটক ও এক স্থানীয় বাসিন্দা। সেই ভয়াবহ ঘটনার পরেই সেনাবাহিনীর তরফে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়ে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জ়েনিফার সেই অভিযানের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, কিন্তু সঙ্গে যুক্ত করেছেন এক যন্ত্রণাবিদ্ধ প্রশ্ন—”যারা আমার স্বামীকে মেরেছিল, তাদের কী হল?”
জ়েনিফার জানাচ্ছেন, তাঁদের ছুটি কাটিয়ে সেদিনই পহেলগাঁও থেকে ফেরার কথা ছিল। তিনি বলছেন, “আমি তখন শৌচাগারে ছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড গোলমাল শুনে বাইরে এসে দেখি একজন লোককে গুলি করে খুন করা হচ্ছে। তাঁর পাশে থাকা মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আমাকেও মেরে ফেলো।’ কিন্তু জঙ্গিদের চোখে করুণা ছিল না।”
জ়েনিফারের কণ্ঠস্বর কাঁপে, চোখ ছলছল করে ওঠে। তিনি বলেন, “চার জঙ্গি আমার স্বামীকে ঘিরে ধরে কলমা পড়তে বলে। আমরা খ্রিস্টান, ও পারেনি। আর তাতেই ওকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমি আর আমার মেয়ে সব দেখেছি। সেই মুহূর্তের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি চিৎকার আজও কানে বাজে।”
জঙ্গিদের নিষ্ঠুরতার বিবরণ দিতে গিয়ে জ়েনিফার বলেন, “ওই চার জন যা করেছে, কোনও জন্তুজানোয়ারও এমন করে না। আমি চাই, ওদের প্রত্যেককে খুঁজে বার করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক। ওদের মরাই উচিত।”
ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’ যে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তা মানছেন জ়েনিফার। কিন্তু তার কাছে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে তখনই, যখন তাঁর স্বামীকে খুন করা চার জঙ্গিকে ধরা হবে। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, ভারতীয় সেনা সেটা পারবে। এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “যে ভয়ডরহীন ভাবে ওরা ওসব করেছিল, তেমনই নির্ভীকভাবে যেন ওদের ধরা হয়। ওদের শাস্তি হোক, যাতে আর কোনও পরিবারকে এভাবে ভেঙে না পড়তে হয়।”
জ়েনিফারের দাবি, এ শুধু এক ব্যক্তিগত প্রতিশোধের কথা নয়, এ সারা দেশের নিরীহ পর্যটকদের নিরাপত্তার প্রশ্ন। এবং সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও বাকি—”ওই চার জন কোথায়?”