
কাশ্মীরের রক্তঝরা উপত্যকা থেকে আজ দাদার কাঁধে চেপে নিজের বাড়িতে ফিরলেন কফিনে শুয়ে থাকা শহিদ কমান্ডো ঝন্টু আলি শেখ। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ভারতীয় সেনার স্পেশাল ফোর্সে নিঃস্বার্থ ভাবে দায়িত্ব পালন করা এই বীর জওয়ান এখন আর জীবিত নন, কিন্তু তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে রইল দেশবাসীর হৃদয়ে।
শহিদ ঝন্টুর দাদা রফিকুল শেখ নিজেও সেনাবাহিনীর সদস্য। তিনি বর্তমানে আর্টিলারি রেজিমেন্টের সুবেদার হিসেবে কর্মরত। গত একবছর ধরে তিনিও কাশ্মীরে পোস্টিংয়ে রয়েছেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝন্টু ছোট হলেও দেশপ্রেমে কারও থেকে কম ছিলেন না। তাঁর সাহস, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং প্রাণপণ চেষ্টা দেশকে সুরক্ষিত রাখতে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ছিল অটুট।
শনিবার ভোরবেলা, যখন ব্যারাকপুর সেনা ছাউনিতে শহিদ ঝন্টুর মরদেহ পৌঁছয়, তখন পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় তাঁকে দেওয়া হয় গার্ড অফ অনার। সেই সময় উপস্থিত ছিলেন সহকর্মীরা, পরিবার ও বহু সাধারণ মানুষ, যারা এই শহিদের আত্মবলিদানে কৃতজ্ঞতা জানাতে হাজির হয়েছিলেন।
শেষ শ্রদ্ধার পর ঝন্টুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নদিয়ার তেহট্টে তাঁর পৈত্রিক বাড়িতে। দাদার কাঁধে চেপে ভাইয়ের এই ‘ফেরার’ দৃশ্য যেন চোখের জলে ভাসিয়ে দেয় গোটা গ্রামকে।
রফিকুল শেখ জানান, ‘‘আমি ভাইয়ের আত্মত্যাগে গর্বিত। সে দেশের জন্য যা করেছে, তা কোনওদিন ভোলার নয়। কিন্তু ভাইকে এভাবে হারানোর কষ্ট বলার মতো নয়।’’

সারা জীবন দেশসেবায় নিয়োজিত থেকেছেন দুই ভাই। ঝন্টু যেখানে ১৪ বছর ধরে বিশেষ বাহিনীর কমান্ডো হিসেবে কাজ করে গেছেন, সেখানে রফিকুলের সেনাবাহিনীতে কর্মজীবন প্রায় ২৮ বছরের। তাঁদের এই দ্বৈত অবদান আজ এক নতুন ইতিহাস রচনা করল।
তেহট্টের আকাশে যখন সুর উঠেছে শোক আর গর্বের, তখন ঝন্টুর স্ত্রী, সন্তান, পরিবার ও প্রতিবেশীরা একসঙ্গে স্মরণ করছেন সেই মানুষটিকে, যিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন দেশের জন্য। তাঁর এই আত্মত্যাগ শুধু এক পরিবার নয়, গোটা জাতির অহংকার।