
ম্যাঙ্গালুরু, ২৭ এপ্রিল ২০২৫: কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালুরুতে এক মর্মান্তিক ঘটনায় কেরালার এক মানসিকভাবে অসুস্থ মুসলিম ব্যক্তি হিন্দুত্ববাদী দলের হামলায় নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক এবং অবহেলার অভিযোগে তিন কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। স্থানীয় মুসলিম সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলো এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
গত ২৭ এপ্রিল, রবিবার, ম্যাঙ্গালুরুর কুদুপুর বাত্রা কাল্লুরথি মন্দিরের কাছে একটি স্থানীয় ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন এই ঘটনা ঘটে। কেরালার কোট্টাক্কালের বাসিন্দা ভিকটিম আশরাফ, পরিবারের সঙ্গে ওয়েনাডের পুলপল্লিতে থাকতেন। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আশরাফ খেলা দেখতে গিয়ে পাশে রাখা এক কাপ জল পান করেন। এতে সাচিন টি. নামে এক ব্যক্তি তাকে ধমক দেন। কিছুক্ষণ পর বিজেপি কর্পোরেটর সঙ্গীতা নায়কের স্বামী রবীন্দ্র নায়কের নেতৃত্বে একটি দল তাকে ক্রিকেট ব্যাট ও অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে। দর্শকদের বাধা সত্ত্বেও মারধর চলতে থাকে, এবং আশরাফ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান।
প্রথমে পুলিশ এই ঘটনাকে অস্বাভাবিক মৃত্যু (ইউডিআর) হিসেবে নথিভুক্ত করে। কিন্তু হামলার ভয়াবহতা প্রকাশ পাওয়ার পর ইন্সপেক্টর শিবকুমার এটিকে হত্যা মামলা হিসেবে পুনর্নথিভুক্ত করেন। অভিযোগ উঠেছে যে পুলিশ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এই অবহেলার জন্য কর্ণাটক পুলিশ বিভাগ তিন কর্মকর্তা—ইন্সপেক্টর শিবকুমার, হেড কনস্টেবল পি. চন্দ্র এবং কনস্টেবল ইয়ালালিঙ্গাকে সাসপেন্ড করেছে। সাসপেনশন আদেশে বলা হয়েছে, “ম্যাঙ্গালুরু গ্রামীণ থানার কর্মকর্তারা দলবদ্ধ হত্যার ঘটনাটি সঠিকভাবে রিপোর্ট করতে এবং উচ্চ কর্তৃপক্ষকে জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন।”
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাচিন টি., থিরুভাইল গ্রামের ২৬ বছর বয়সী এক যুবক, হামলার সূচনাকারী বলে অভিযোগ। পরে ২৫-৩০ জনের একটি দল হামলায় যোগ দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওর সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে।
ওয়েনলক জেলা হাসপাতালের পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা হয়েছে, আশরাফের মৃত্যু অভ্যন্তরীণ রক্তপাত ও শকের কারণে হয়েছে। তার মাথা, হাত-পা, পিঠ, নিতম্ব এবং যৌনাঙ্গে গভীর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এই আঘাত কাঠের লাঠি জাতীয় বস্তু (ক্রিকেট ব্যাট) ও ভোঁতা বস্তু দিয়ে করা হয়েছিল।
হামলাকারীরা দাবি করেছে, আশরাফ ম্যাচের মধ্যে “পাকিস্তান জিন্দাবাদ” স্লোগান দিয়েছিলেন। এই দাবিকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অজুহাত হিসেবে বানোয়াট বলে সমালোচনা করা হয়েছে। সিপিআই-এম নেতা মুনির কাটিপাল্লা পুলিশের ধামাচাপার অভিযোগ তুলেছেন।

এই ঘটনার প্রাথমিক এফআইআর দায়ের করেছিলেন অভিযুক্ত মঞ্জুনাথ, যিনি আশরাফকে “অজ্ঞাত মৃতদেহ” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। একটি লুকআউট নোটিশে বলা হয়েছিল, ভিকটিমের মৃত্যু মদ্যপান বা পড়ে যাওয়ার কারণে হয়েছে, যা মব লিঞ্চিংয়ের ঘটনাকে লুকানোর চেষ্টা বলে সমালোচিত হয়েছে। দক্ষিণ কন্নড় কংগ্রেস কমিটি মঙ্গলুরু পুলিশ কমিশনার অনুপম আগরওয়াল ও ইন্সপেক্টর শিবকুমারের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দেওয়া ও মামলার অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেছে। সামাজিক কর্মী পিএমএ খাদের পুলিশের ৩৬ ঘণ্টার নীরবতা ও পোস্টমর্টেমে ৩২ ঘণ্টার বিলম্বকে সন্দেহজনক বলে উল্লেখ করেছেন।
এই ঘটনা সমাজে গভীর উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্ত চলমান রয়েছে এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি উঠেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে সামাজিক সচেতনতা এবং আইনি ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি।