নিউটাউন নাবালিকা হত্যা কাণ্ড: তদন্তে নতুন মোড়, গ্রেফতার টোটো চালক
৯ই ফেব্রুয়ারি,২০২৫, নিউটাউন, উওর ২৪ পরগনা:
গত শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) নিউটাউনের লোহা ব্রিজ সংলগ্ন জঙ্গল থেকে ১৪ বছর বয়সী এক নাবালিকার অর্ধনগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক ময়নাতদন্তে শ্বাসরোধে হত্যা ও যৌন নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায় । তদন্তে এগিয়ে এসেছে সিসিটিভি ফুটেজ, যার ভিত্তিতে ই-রিক্সা (টোটো) চালক সৌমিত্র রায় ওরফে রাজ (২৬) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান নাবালিকা। একটি চিঠি রেখে যান, যাতে উল্লেখ ছিল বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ।
জগৎপুরের ৭ নম্বর এলাকার সিসিটিভিতে নাবালিকাকে একটি টোটোতে উঠতে দেখা যায়। চালক তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সামনের সিটে বসায় এবং পরে অন্য যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে তাঁকে নিয়ে অন্ধকার স্থানের দিকে যায়।
টোটো চালক নিউটাউনের নির্জন ঝোপ-জঙ্গলে (নিউ এক্সিস মলের পিছনে) নাবালিকাকে নিয়ে যায়। সেখানে যৌন নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় ।
শুক্রবার সকাল ৯:৩০টার দিকে লোহাপুলের কাছে একটি ঝোপে মৃতদেশ পাওয়া যায়। দেহে নখের আঁচড়, যৌনাঙ্গে আঘাত ও মুখে ফেনা দেখা যায় ।
গ্রেপ্তার হওয়া সৌমিত্র রায় নদীয়ার রানাঘাটের বাসিন্দা এবং সে নিউটাউনের গৌরাঙ্গনগরে ভাড়া থাকতো । সিসিটিভি ফুটেজ, বাজেয়াপ্ত টোটো থেকে প্রাপ্ত প্রমাণ এবং চালকের বয়ানে অসঙ্গতি দেখে চালককে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পকসো (POCSO) আইন ও খুনের মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে বারাসাত আদালতে পেশ করা হবে ।
মৃতদেহ বাড়ি পৌঁছানোর পর স্থানীয়রা পুলিশের গাড়ি আটকিয়ে বিক্ষোভ করে। তাঁরা দ্রুত বিচার ও তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের দাবি তোলেন ।
নিউটাউনবাসী রাস্তাঘাটে কঠোর সিসিটিভি ও পুলিশি নজরদারি চেয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ রোধ করা যায় ।
মৃত্যুর কারণ ম্যানুয়াল স্ট্র্যাঙ্গুলেশন (হাত দিয়ে গলাটিপে শ্বাসরোধ)। যৌনাঙ্গে আঘাত ও শরীরে নখের দাগ যৌন নির্যাতনের ইঙ্গিত দেয় ।
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ডিএনএ ও অন্যান্য প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন। চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হবে ।
পুলিশ জগৎপুর থেকে নিউটাউন পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার রুটের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করছে। এছাড়া, দুটি মোটরসাইকেলের ফুটেজও তদন্তের আওতায় রয়েছে ।
নাবালিকার পরিবার শোকস্তব্ধ হয়ে ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা পুলিশের তদন্তে আস্থা রেখেছেন এবং আশা করছেন, অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।