নেই জৌলুস, নেই আর বিশ্বকর্মা পুজো – মন খারাপ বার্নপুর ওয়াগেন কারখানার প্রাক্তন শ্রমিকদের

উজ্জ্বল দাস,আসানসোল : ২০১৮-র এপ্রিলে কারখানা বন্ধের বিজ্ঞপ্তি পড়ে। ওই বিজ্ঞপ্তির পরে কারখানার শ্রমিকদের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় কারখানায়। পাঁচ হাজার শ্রমিক ছিল এক সময় এই কারখানায়। স্থায়ী শ্রমিকরা শেষ পাওনাগণ্ডা টুকু পেলেও কারখানার ১৫০ ঠিকা শ্রমিক বা অস্থায়ী কর্মীরা এখনও টাকাপয়সা পাননি। তাই ভগ্ন আবাসনেই পড়ে আছেন শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত কলোনীতেই ছোট্ট করেই বিশ্বকর্মা পুজো করছেন কলোনীর বাসিন্দারা। ব্যস ওইটুকুই।

বছর তিনেক আগেও বিশ্বকর্মা পুজো হয়েছিল কারখানার ভেতর ২৫ টি ইউনিটে। কিন্তু এবছর আর পুজো হল না বার্নস্ট্যান্ডার্ড ওয়াগেন কারখানার বার্নপুর ইউনিটে। কারখানা বন্ধ, শ্রমিক আবাসনগুলিতে কেটে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুত ও জলের লাইন। কারখানার পাশাপাশি শশ্মানের নিস্তব্ধতা এখন বার্ন ওয়াগেন কলোনীতেও। সাউন্ড বক্সে গান নেই, নেই বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষ্যে মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নেই এলাকাজুড়ে লাল-নীল কাগজের মোড়ক, নেই সেই হৈ হুল্লোরও। কারখানার শতবর্ষেই আবাহন হল না বিশ্বকর্মার। কারখানার শতবর্ষ পূর্তি হতে পারতো। একইভাবে শতবর্ষ পূর্তি হতে পারতো বিশ্বকর্মা পুজোরও। কিন্তু কারখানাটাই যে বন্ধ।

একসময় কারখানার ২৫ টি ইউনিটে বিশ্বকর্মা পুজো হত। শ্রমিকরা প্যাকেট প্যাকেট মিষ্টি বাড়ি নিয়ে যেতেন। কারখানার ভেতর অরকেস্ট্রা গান বাজনা হত। শ্রমিক পরিবাররা সেই অনুষ্ঠানে আসতেন। কারখানার ওয়েলডিং বিভাগ, এইচটিআর, পামসপ, মেইনটেনেন্স সমস্ত বিভাগে জাঁকজমক ভাবে পুজো হত। পুজোর প্রতিযোগিতা থাকতো এক একটি ইউনিটের সঙ্গে। কিন্তু এবার হাতাশার সুর প্রাক্তন শ্রমিক ও আবাসিকদের মধ্যে। আবাসন এলাকায় জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ কেটে দেওয়ায় শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫-৭৬ সালে কারখানাটির নাম হয় বার্ন স্ট্যান্ডার্ড। এই সালেই সংস্থাটির রাষ্ট্রায়ত্তকরণ হয়। রেলের ওয়াগন নির্মাণে বিখ্যাত ছিল এই কম্পানি। ২০১০ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময় বার্নস্ট্যান্ডার্ড অধিগ্রহণ করেছিল রেল। কিন্তু সংস্থাটি লাভজনক থাকতেই ২০১৮ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় চিরতরে। বিশ্বকর্মার কাছে প্রার্থনা, যেন আবার চালু হয় এই শিল্প। কাজ ফিরে পাক শ্রমিকরা।

Latest articles

Related articles