করোনা কালে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, গরিবরা আরও গরিব হচ্ছে: অক্সফাম রিপোর্ট

এনবিটিভি ডেস্কঃ সম্প্রতি দেশে করোনা মহামারীতে অক্সফাম সার্ভেতে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। যার মূল বিষয়, বৈষম্যের শিকার সাধারণ মানুষ। ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, গরিবরা আরও গরিব হচ্ছে। অক্সফাম রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সবচেয়ে ধনী ৯৮জন ভারতীয়ের সম্পদ ৫৫.২ কোটি টাকার সমান। এই করোনা কালেও গত চার বছরে ৭০ জন নতুন বিলিয়নিয়ার তৈরি হয়েছে। আদানি, আম্বানির সম্পদ মহামারীর সময় ১০ গুণ বেড়েছে।

অক্সফাম প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে যে, দেশের ৮৪ শতাংশ পরিবারের আয় ২০২১ সালে হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে একই সময়ে ভারতীয় ধনকুবের আয়ের পরিমাণের সংখ্যা ১০২ থেকে ১৪২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি (৩৯%) হয়েছে।

আম্বানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

যদিও ভারত বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশের একটি, তবে এটি সবচেয়ে অসম দেশগুলির মধ্যেও একটি । বিরোধীদের অভিযোগ যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সময়কালে ধনী পন্থী নীতির জন্য আদানি এবং আম্বানির ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। রিপোর্ট অনুসারে, মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় অর্থাৎ ২০২০ সালের মার্চ মাসের থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ভারতীয় বিলিওনিয়ারদের ২৩.১৪ লক্ষ কোটি থেকে বেড়ে ৫৩.১৬ লক্ষ কোটি হয়েছে। বিলিওনিয়ারদের সম্পদের এই বৃদ্ধি ২০২১-২২ অর্থবছরের কেন্দ্রীয় বাজেটের ৩৪.৮৩ লক্ষ কোটি টাকার অর্থাৎ ৮৬ শতাংশের সমান।

গত তিন দশক ধরে বৈষম্য তীব্রভাবে বাড়ছে। ধনীরা ক্রমে পুঁজিবাদ এবং উত্তরাধিকারের মাধ্যমে সৃষ্ট সম্পদের একটি বিশাল অংশ পাহাড় তৈরি করছে। একদিকে যখন দরিদ্ররা এখনও ন্যূনতম মজুরি পেতে এবং মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পেতে লড়াই করছে, অন্যদিকে ধনীরা আরও দ্রুত গতিতে ধনী হচ্ছে।

যদিও জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০২০ সাল থেকে প্রতিদিন ১৭৮ টাকায় রয়ে গেছে। গৌতম আদানি এক বছরে তার মোট সম্পদের ৮ গুণ বৃদ্ধি করেছেন। ২০২০ সালে ৬৫৮৬০ কোটি টাকা থেকে ২০২১ সালে ৩.৭৩ লক্ষ কোটিতে বৃদ্ধি করেছেন । ফোর্বসের রিয়েল টাইম তথ্য অনুসারে, মুকেশ আম্বানির মোট সম্পদ ২০২১ সালে দ্বিগুণ হয়ে বর্তমান ৬.৩২ লক্ষ কোটি হয়েছে, যেখানে ২০২০ সালে ২.৭২ লক্ষ কোটি টাকা ছিল।

গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এই ক্রমবর্ধমান ব্যবধান এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্য নারী ও শিশুদের সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিমাংশু সারসংক্ষেপ করে বলেন, “ভারতের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উদ্বেগের বিষয় হল যে, একটি সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য শিকার হচ্ছে, যেটি ইতিমধ্যে জাত, ধর্ম, অঞ্চল এবং লিঙ্গের লাইনে ভেঙে পড়েছে।”
উল্লেখ্য, দেশের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ মানুষের কাছে মোট সম্পদের ৭৩ শতাংশ সম্পদের মালিক। ভারতীয় জনসংখ্যার শীর্ষ ১০ শতাংশ মানুষ মোট জাতীয় সম্পদের ৭৭ শতাংশ সম্পদের মালিক। ২০১৭ সালে উত্পন্ন সম্পদের ৭৩ শতাংশ সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ এর কাছে গিয়েছিল। যেখানে ৬৭ মিলিয়ন ভারতীয় যারা জনসংখ্যার সবচেয়ে দরিদ্র অর্ধেক নিয়ে গঠিত তাদের সম্পদের মাত্র ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

Latest articles

Related articles