বাঙালির সংস্কৃতি বলতে যাঁর নাম না বলতেই উঠে আসেন, তিনি রবীন্দ্রনাথ। তিনি সেই কবেই ‘রক্তকরবী’তে জন্ম দিয়েছিলেন নন্দিনীর, গড়ে তুলে ছিলেন বিশু পাগলকে। এই রক্তকরবী আজও সাক্ষী যে “বিপ্লবের রঙ লাল” , ভালোবাসার রঙ-ও। সেই রক্তকরবী হাতেই এবার প্রতিবাদের সুর চলচ্চিত্র জগতের “বামমনস্ক জনমন”-এর।সেখানে স্পষ্ট ইঙ্গিত হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে। গানের শুরুতে “তুমি পুরাণকে বলো ইতিহাস, ইতিহাসকে বলো পুরানো” – এ যেন আরও একবার রাম মন্দির বাবরি মসজিদের রায়কে মনে করিয়ে দিচ্ছে। তাঁরা আরও বলছেন : “তোমার ভক্তিতে দাগ রক্তের তুমি কাউকেই ভালোবাসো না” কিংবা ” ধৈর্যের রস ঘিলু থেকে তুমি সবটুকু শুষে নিয়েছো”। গানে দৃশ্যে ঘুরে ফিরে এসেছে অতি পরিচিত জনপ্রিয় মুখেরা,এসেছেন ঋদ্ধি,সুরঙ্গনা,অরিন্দম,কৌশিক,দেবলীনা,রূপঙ্কর আরও অনেকে। তাদের দাবী,ফ্যাসিবাদী সরকার সমস্ত ধর্মীয় সমস্যার সরলীকরণ করেছেন পাকিস্তান দিয়ে গুণ করে, দেশপ্রেমের নামে যে বিষ তারা ইন্জেক্ট করছে মানুষের শরীরে তা রক্ত ছাড়া কিছুই নয়। চোখ কান খোলা থাকলেই গোয়েবেলসের আয়নার প্রতিফলনে ধরা পরে যাবে এই সরকারের সব ভন্ডামি,এমনই দাবী করা হয়েছে গানে।গানে দৃশ্যে বারংবার ঘুরে ফিরে এসেছে রেপ কেস, মার্ডার, নোটবন্দীর কষ্ট, NRC CAB CAA বিলের বিরোধ, কৃষিবিলের ভোগান্তি, মৃত কৃষকদের ছবি, সরকারী সংস্থার প্রাইভেটাইজেশনের কথা ছাড়াও আরও ধ্বংসের ছবি।
বুদ্ধিজীবীদের এমন একটি সৃষ্টি #NovoteforBJP# প্রচারের একটা শক্তিশালী হাতিয়ার বলেই মনে করছেন নেটিজেনরা। গানের শেষে দেখা গিয়েছে একটি ছোট্ট মেয়ে, যেন রক্তকরবীর সেই নন্দিনী, যে আলো আনবে, আনবে নতুন দিন এই দেশে। তার ঠোঁটে তখন : “আমি অন্য কোথাও যাবনা,আমি এই ভারতবর্ষেই থাকব”। প্রবীণ প্রজন্ম নবীন প্রজন্মের হাতে তুলে দিচ্ছে ‘রক্তকরবী’ ও দেশের পতাকা। ফাঁকা মঞ্চে তখনও নন্দীনির ঘোষণা : “আমরা ভারতবাসী,আমাদের ন্যায় পাওয়ার অধিকার আছে,নিজের ভাবার অধিকার আছে,অধিকার আছে মতপ্রকাশের,আমাদের নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস আছে এবং সমতার অধিকারও আছে,আর সর্বপোরি আমাদের একতা আছে”। গানের দুটো লাইনে তাঁরা পরিষ্কার করে দিয়েছেন : ভারতবাসী নিজেদের ভালো নিজেরাই বুঝে নেবেন। মানুষের পরিচিত মুখের এমন একটি সৃষ্টি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।