মুর্শিদাবাদের সঙ্গে বাংলাদেশের পুরনো সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করতে হবে,আগের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি আরো জোরালো হচ্ছে

নিউজ ডেস্ক : ইতিহাস, ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা এবং আত্মীয়তার অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ ভারত এবং বাংলাদেশ। বিশেষ করে এই সম্পর্কের দুই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হল ওপার বাংলা এবং এবার বাংলা। বহু বার চেষ্টা করেও এই দুই বাংলার যাত্রাপথ পৃথক করা যায়নি। এখনও ভুগলিক বাধার কারণে দুই বাংলার মধ্যে দূরত্ব একটু বেশি হলেও সম্পর্কের ঘনিষ্ট দিক অনেক। এই সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করতে মুর্শিদাবাদে নতুন একটি স্থল বন্দর তৈরি করার দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। ২০০৪ সাল পর্যন্ত এই জেলার লালগোলাতে একটি স্থলবন্দর থাকলেও পরে নিরাপত্তাজনিত কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।

ঐতিহাসিকগত দিক থেকে মুর্শিদাবাদের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত পুরনো এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের ওপর ভিত্তি করে তা রচিত। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পরও মুর্শিদাবাদ জেলার বেশ কিছু অংশ বাংলাদেশের মধ্যে ছিল এবং সেই সময় কয়েকদিন ধরে ওই জায়গাগুলিতে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উড়ত। পরবর্তীকালে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে মুর্শিদাবাদ জেলা পুরোপুরি ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
কিন্তু দেশভাগের আঁচ এখনও দু-‌দেশের আত্মীয়তার সম্পর্কে ভাঙন ধারাতে পারেনি। এখনও দুই দেশের প্রচুর লোকেদের আত্মীয়-স্বজন ভারত এবং বাংলাদেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তবে কোন প্রয়োজনে মুর্শিদাবাদের নাগরিকদের বাংলাদেশে আত্মীয়র বাড়িতে যেতে গেলে এখন প্রচুর অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়।
মুর্শিদাবাদের নিকটতম স্থলবন্দর মালদার মেহদীপুর অথবা নদিয়ার গেদে প্রায় দু’শো কিলোমিটার দূরে। তাই ওই দুই স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে যেতে গেলে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দাদের অনেক বেশি পয়সা খরচ এবং সময় ব্যয় করতে হয়।

মুর্শিদাবাদ জেলার মানবাধিকারকর্মী জুলফিকার আলি বলেন,”১৯১২ সালে পর্যন্ত মুর্শিদাবাদের বামনাবাদের সাথে বাংলাদেশের রাজশাহীর অত্যন্ত সুদৃঢ় সম্পর্ক ছিল। তখন গোটা এলাকাই ভারতবর্ষের অন্তর্গত ছিল। এখানকার বিখ্যাত জমিদার অধর চন্দ্র দের জমিদারি এলাকা থেকে রাজশাহীতে প্রচুর পণ্য যেত। এমনকি সেই সময়ে বহরমপুরের জেলখানাও রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজশাহীর লোকনাথ বিশ্বেশ্বর হিন্দু একাডেমিতে এখানকার মেধাবী ছাত্ররা উচ্চশিক্ষার জন্য যেত।”

তিনি বলেন, “সময়ের কালপ্রবাহে এবং পদ্মা নদীর ভাঙ্গন এই এলাকার ভৌগোলিক চিত্র পাল্টে দিয়েছে। দেশভাগের পর নিজেদের জীবন যাপনের জন্য এই এলাকার প্রচুর মানুষ ধীরে ধীরে লবণ, চিনি, বিড়ির পাতা, পেরেক থেকে শুরু করে জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটি জিনিস বাংলাদেশে পাচারের সাথে জড়িয়ে পড়ে।
প্রথম দিকে এই সমস্ত জিনিস আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে পাঠানোর উদ্দেশ্য থাকলেও পরে এই পাচার সঙ্ঘবদ্ধ চোরাচালানের রূপ নেয় এই এলাকায়।”

জুলফিকার আলি বলেন,”তাই আমরা বছর দুয়েক আগেই বাংলাদেশ সরকার এবং ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেছি মুর্শিদাবাদের কাকমারির সাথে বাংলাদেশের চারঘাট এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা নতুন করে গড়ে তোলার জন্য।”

বর্ডার ডেভলপমেন্ট কমিটির সভাপতি মইনুল হক বলেন,”বাংলাদেশের সরকার যাতে রাজশাহী জেলার চারঘাটে একটি ল্যান্ডপোর্ট গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় তার জন্য আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অনেকদিন আগেই চিঠি দিয়েছি। মুর্শিদাবাদের কাকমারি ও বাংলাদেশের চারঘাটের দূরত্ব খুব কম। পদ্মা নদীতে একটি ব্রিজ বা জলপথের মাধ্যমে ২ দেশের মধ্যে যদি আবার যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তাহলে দুই দেশের যাতায়াত ব্যবস্থা এবং সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। আমাদের আশা এর ফলে এলাকাতে চোরাচালানও অনেক কমবে। কারণ তখন মানুষ বৈধভাবেই জিনিসপত্র এক দেশ থেকে অন্য দেশে নিয়ে যেতে পারবে।”
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পিএসির চেয়ারম্যান অধীর চৌধুরীও মুর্শিদাবাদের কাকমারি এবং বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার চারঘাটের মধ্যে একটি ল্যান্ড পোর্ট তৈরির আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন। ওই চিঠিতে অধীর বাবু লিখেছেন, পদ্মা নদীর ওপর যদি কোনও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় তাহলে তা ২ দেশের অর্থনীতিকে আরও সুসংহত করতে সক্ষম হবে।
সূত্র : আজকাল

Latest articles

Related articles