উত্তরপ্রদেশের মৈনপুরী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্মীদের গাফিলতি ও অবহেলার অভিযোগে এক মর্মান্তিক রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ৬০ বছর বয়সী প্রবেশ কুমারী নামে এক মহিলা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরও সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিভাগে চিকিৎসক ও কর্মীদের গাফিলতি এবং অসদাচরণের কারণে ওই মহিলার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যম ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা উঠেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে প্রবেশ কুমারীকে গুরুতর অবস্থায় মৈনপুরী সরকারি হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যদের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রবেশ কুমারী হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তার অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন ছিল। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে ফেলে রাখা হয়। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, এ সময় ডাক্তার ডিউটিতে থাকলেও রোগীকে দেখার পরিবর্তে মোবাইল ফোন ব্যবহারে ব্যস্ত ছিলেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা বারবার ডাক্তারকে রোগী দেখার জন্য অনুরোধ করেন, কিন্তু ডাক্তার নিজে না এসে একজন নার্সকে রোগী দেখার দায়িত্ব দেন। নার্স প্রবেশ কুমারীকে সাধারণ সর্দি-জ্বরের রোগী হিসেবে চিকিৎসা শুরু করেন, যদিও তার অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর ছিল। পরিবারের সদস্যদের মতে, এই অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে।
রোগীর ছেলে গুরুচরণ সিং সংবাদমাধ্যমে জানান, তার মায়ের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে এবং মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে। এ সময়ও ডাক্তার চেয়ারে বসে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিলেন। পরিবারের সদস্যরা বারবার সাহায্য চাইলে ডাক্তার রেগে গিয়ে গুরুচরণ সিং-এর গালে চড় মেরে বসেন। এই ঘটনায় হাসপাতাল চত্বরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ডাক্তার চেয়ারে বসে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন, নার্স রোগীকে দেখছেন এবং পরে রোগীর ছেলেকে চড় মারার দৃশ্যও ধরা পড়ে। এই ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ঘটনাটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
মৃত রোগীর ছেলে গুরুচরণ সিং সংবাদমাধ্যমে বলেন, “আমি আমার ভাইদের সঙ্গে মৈনপুরী সরকারি হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিভাগে আমার মাকে নিয়ে এসেছিলাম। তার অবস্থা খুবই গুরুতর ছিল, আমরা তাঁকে স্ট্রেচারে শুইয়ে রেখেছিলাম। রোগীকে দেখছিলেন কম্পাউন্ডার ও নার্স, কিন্তু ডাক্তার তার নিজের চেয়ারে বসেছিলেন, মোবাইল ঘাঁটতে ব্যস্ত ছিলেন। নার্স আমার মাকে সাধারণ সর্দি-জ্বরের রোগী হিসেবে চিকিৎসা করা শুরু করেন। চিকিৎসক তাঁকে বলেন যে নার্স দেখার পরেই মা সুস্থ হয়ে যাবেন। আমরা খুবই হতাশায় ছিলাম। আমরা মায়ের হাত-পা ডলে দিচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পরেই মায়ের মুখ দিয়ে রক্ত বেরোতে শুরু করে। সেই সময়েও ডাক্তার চেয়ারেই বসেছিলেন। পরে প্রচণ্ড রেগে আমাদের কাছে আসেন এবং আমাকে চড় মারেন।”
ঘটনাটি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে ঘটনাটি তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক ডা. আদর্শ সঙ্গরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণ ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অনেকেই চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সিসিটিভি ফুটেজটি ঘটনার গুরুত্ব ও ভয়াবহতা তুলে ধরেছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তারা চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পরিকল্পনা করছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে ঘটনাটি তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়নি।
এই ঘটনা চিকিৎসা সেবার মান এবং চিকিৎসকদের দায়িত্ববোধ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠলেও এই ধরনের ঘটনাগুলো জনগণের আস্থা আরও কমিয়ে দিচ্ছে। এই ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং সরকারি হাসপাতালগুলোর সেবার মান উন্নয়নের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পরিবারের সদস্যদের দাবি, এই ঘটনায় যেন আর কেউ চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারাতে না হয়।