ওয়াকফ শব্দটি এসেছে একটি আরবি শব্দ থেকে। এর অর্থ দান। ভারতীয় সংবিধানে ১৯৫২ সালের প্রথম ওয়াকফ আইন বলবৎ করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে ওয়াকাফের আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট পাস করানো হয়। ভারতীয় সংবিধানে সেকশন ৩ অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি ঈশ্বরের নামে দান করলে, তাকে ওয়াকাফ বলা হয়। এটি যে কোন সম্প্রদায়ের মানুষ করতে পারে।
গতকাল জেপিসি, অর্থাৎ যৌথ সংসদীয় কমিটি তে পাশ করানো হলো, ওয়াকফ বিল ও কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্ট। আজ এই বিলটি স্পিকার ওম বিল্ডার হাতে তুলে দেবেন জেপিসির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল। বুধবার সকাল দশটায় ওয়াকফ সংক্রান্ত সর্বশেষ বৈঠক করে কমিটি। প্রথমেই সরকার অনায়াসে ১৪-১১ ভোটে পাস করিয়ে নেন এই বিলটি। গতকাল তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও নাদিমুল হকের পক্ষ থেকে ৩৫ টি ধারায় চূড়ান্ত সমালোচনা করে আপত্তিগুলোকে লিপিবদ্ধ করা হয়।
সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদ মাধ্যমকে জানান – “কেন্দ্রের আনা ওই বিলের লক্ষ্য হল ওয়াকফের হাতে থাকা সম্পত্তি বিশেষ করে জমি ও ভবন নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু এ নিয়ে সংবিধানে রাজ্যকে আইন আনার ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। ফলে কেন্দ্র কী ভাবে ওই আইন আনে?” নতুন আইনে বলা হয়েছে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কোন মানুষ যদি ইসলাম ধর্মে অনুপ্রাণিত হয়ে, ধর্ম পরিবর্তন করে থাকে, তাহলে তিনি দীর্ঘ পাঁচ বছর ওয়াকাপ করতে পারবেন। বিরোধীরা বিজেপিকে বিদ্ধ করে প্রশ্ন তুলছে হিন্দুদের দেবত্ব সম্পত্তিতে এমনটা হয় না কেন? বিজেপির পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয় সমগ্র দেশে প্রায় ৭৫০০ ওয়াকফ বোর্ডের মামলা ঝুলে রয়েছে। এই সমস্যা দূর করতে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস করেছে সরকার। অপরদিকে বিরোধীরা আশঙ্কা করছে, ওয়াকফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা সস্তায় বিক্রি করার উদ্দেশ্যে সরকারের এমন উদ্যোগ। মনে রাখতে হবে, সমগ্র ভারতবর্ষে মোট ওয়াকাফ সম্পত্তি আনুমান ১.২ লক্ষ্য কোটি টাকা।
২০২৪ এ ওয়াকফ সম্পত্তি বিলে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।
১) আগে যেকোনো সম্পত্তিকে ওয়াকফ সম্পত্তি বলে গণ্য করা যেত। এখন জেলার প্রশাসক বা ডেপুটি কমিশনারের হাতে দেওয়া হয়েছে।
২) ওয়াকাফের অন্তর্ভুক্ত সমস্ত সম্পত্তি গুলিকে কেন্দ্রীয় পোর্টালে ডিজিটাল নথিভুক্ত করন করতে হবে।
৩) তিন সদস্যের ট্রাইবুনাল ২ সদস্যে সীমিত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নয়। ৯০ দিনের মধ্যে এপিল করা যাবে।
৪) ওয়াকাফ বোর্ড এবং সেন্ট্রাল ওয়াকাফ কাউন্সিলে অমুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এই পরিবর্তনগুলি একেবারেই ভালো চোখে দেখছেন না সংখ্যালঘু মানুষ সহ প্রায় সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল।