
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টা এলন মাস্কের নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশটি। শনিবার নিউ ইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস, আলাস্কা থেকে ফ্লোরিডা পর্যন্ত প্রায় ১,২০০ স্থানে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়েছে লাখো মানুষ। বামপন্থী সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, নাগরিক অধিকার গোষ্ঠী, ছাত্র ও নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত জোটের ডাকে এই বিক্ষোভে উঠে এসেছে ক্ষমতাসীনদের সমাজবিরোধী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ।
কেন এই বিক্ষোভ?
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলিকে অভিহিত করা হচ্ছে “সাধারণ মানুষের বিপক্ষে ধনী কর্পোরেট গোষ্ঠীর স্বার্থে” পরিচালিত পদক্ষেপ হিসেবে। সরকারি চাকরি, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পে ব্যাপক ছাঁটাই, অভিবাসন নীতির কঠোরতা, এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণের ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষ চরম সংকটে পড়েছেন। মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে বাড়ছে বেকারত্ব, জ্বালানি থেকে শুরু করে নিত্যপণ্যের দাম। অন্যদিকে, কর্পোরেট করদাতাদের জন্য কর হ্রাস ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ট্রাম্প-মাস্ক জুটির বিরুদ্ধে।
প্রতিবাদে কারা?
বিক্ষোভকারীদের দাবি, ট্রাম্প প্রশাসন গণতন্ত্রকে দুর্বল করে একটি “অভিজাততান্ত্রিক ব্যবস্থা” চাপিয়ে দিতে চাইছে, যেখানে সংখ্যালঘু, অভিবাসী, নারী ও LGBTQ+ সম্প্রদায়ের অধিকার হুমকির মুখে। সম্প্রতি রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষের আইনি স্বীকৃতি বাতিল, সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ তুলে দেওয়া এবং বেসরকারি হাতে ছাত্রঋণের দায় ছেড়ে দেওয়ায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে। দক্ষিণের রিপাবলিকান শক্ত ঘাঁটি যেমন নর্থ ক্যারোলাইনা ও ফ্লোরিডাতেও ট্রাম্প-বিরোধী এই জোয়ার নেতৃত্বে চিন্তিত করে তুলেছে।

হোয়াইট হাউস এই বিক্ষোভকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে আখ্যা দিয়ে দাবি করেছে, “অবৈধ অভিবাসীদের সুবিধা দেওয়ার নামে সরকারি পরিষেবা কাটছাঁটের গুজব ছড়ানো হচ্ছে।” তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের ভোটারদের একাংশও এখন অর্থনৈতিক সংকট ও সামাজিক বিভাজনের কারণে তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট।
২০২৪-এর নির্বাচনে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও ট্রাম্পের নীতির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সমালোচনা তীব্র হয়েছে। শনিবারের এই বিক্ষোভকে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসে “সবচেয়ে বড় গণআন্দোলন” হিসেবেও উল্লেখ করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। রাজনৈতিক পালাবদলের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপই এখন সবার নজরে।