নিউজ ডেস্ক : স্বামীর দাস নয় স্ত্রী, তার স্ত্রী না চাইলে জোর করে তাকে নিজের কাছে রাখতে পারবেনা তার স্বামী, এমনই রায় প্রদান করল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এক ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন এই মর্মে যে তার স্ত্রী তার সঙ্গে থাকতে ইচ্ছুক নয় কিন্তু তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ তাই তার স্ত্রীকে তার সঙ্গে থাকতে দেওয়া হোক। ওই ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়। স্বভাবতই বিভিন্ন মহল থেকে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে। অনেকে বলছেন সুপ্রিম কোর্টের বিবাহ বিরোধী এই রায় সামাজিক গঠনতন্ত্র এবং প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা রয়েছে তাকেই দুর্বল করে দেবে। আবার একশ্রেণীর নারীবাদীরা এ রায়কে খুশির সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, বহুদিন ধরে চলে আসা বৈবাহিক জীবনের পরাধীনতা থেকে এবার নারীসমাজ মুক্তি লাভ করবে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের ফলে।
গতকালের ওই মামলায় শীর্ষ আদালতে বিচারপতি সঞ্জয় কিশন কাউল এবং বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তের এসসি বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে, কোনও মহিলাকে নিজের সম্পত্তি বা দাসী ভাবা কতটা যুক্তিসঙ্গত? ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল গোরক্ষপুরের একটি পারিবারিক আদালত কর্তৃক গৃহীত হিন্দু বিবাহ আইন (এইচএমএ)-এর ৯ নং ধারায় এই ব্যক্তির পক্ষে পাশ হওয়া বিবাহবন্ধনের অধিকার পুনরুদ্ধারের রায়ের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে । ওই মহিলা আদালতে জানান, ২০১৩ সালে বিয়ের পর থেকে পণের জন্য তাঁর উপর নির্যাতন চালাত তাঁর স্বামী । স্বামীই তাঁকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বাধ্য করেছিল । ২০১৫ সালে খোরপোশের জন্য মামলা করেন ওই মহিলা । গোরক্ষপুরের আদালত ওই ব্যক্তিকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা খোরপোশ দেওয়ার কথা বলেছিল । এরপরেই পারিবারিক আদালতে বিবাহবন্ধনের অধিকার পুনরুদ্ধারের আবেদন করেছিল ওই ব্যক্তি । আদালতে ওই ব্যক্তি জানায়, যখন সে একসঙ্গে থাকতে চায় তখন খোরপোশ দেওয়ার প্রশ্ন কেন উঠছে ।
ওই মহিলার আইনজীবী অনুপম মিশ্র সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি রক্ষণাবেক্ষণের খরচ এড়ানোর জন্য এই ‘খেলা’ শুরু করেছে । অপর দিকে ওই ব্যক্তির আইনজীবী স্ত্রী’কে স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন । এর প্রত্যুত্তরেই শীর্ষ আদালত জানায়, ‘স্ত্রী কোনও কেনা সম্পত্তি নন, বা দাসীও নন । তিনি যখন কোথাও যেতে চান না, তখন তাঁকে পণ্যের মতো কোথাও পাঠানো যায় না ।’ তবে অনেক সমাজ বিশেষজ্ঞ এই ব্যাপারে অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট যে প্রেক্ষাপটে রায় দিয়েছে সেটি আপাতদৃষ্টিতে সঠিক কিন্তু এটির বৃহত্তর প্রভাব যে ভারতীয় সমাজ বিবাহ ব্যবস্থা এর উপরে পড়বে সেটা অনস্বীকার্য।