উন্নয়ন, আচ্ছে দিন সব বাদ দিয়ে মালদহে যোগী মাতলেন বিভাজন আর জয় শ্রীরামের খেলায়

নিউজ ডেস্ক : রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন কড়া নাড়ছে দরজায়। শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন রাজ্যের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি। এ রাজ্যের অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি এখন বিজেপির সাম্প্রদায়িক শক্তি। তবে আজ সেদিন বেকারত্বের বিরুদ্ধে স্লোগান পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিরোধিতা ইত্যাদি দিয়ে প্রথমে ক্ষমতায় আসা বিজেপি সরকার তাদের দেওয়া কোনো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। সেই কারণে এখন আর উন্নয়নের ভাষা শোনা যায় না বিজেপি নেতাদের মুখে। তার পরিবর্তে শোনা যায় বিভাজনের রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ধর্মীয় মেরুকরণ সৃষ্টিকারী ভাষণ এবং গেরুয়া সন্ত্রাসবাদীদের স্লোগান জয় শ্রীরাম। আর ঠিক সেই সময়েই দেখা গেল উত্তর প্রদেশের কট্টর হিন্দুত্ববাদী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ কে আজ মালদা শহরে। মালদহের বিজেপির তথাকথিত পরিবর্তন যাত্রার সূচনা করতে এসে যোগী আদিত্যনাথ আজ বলেন বাংলায় জয় শ্রীরাম ধ্বনি বন্ধ করার অপচেষ্টা এবং ঘোর চক্রান্ত চলছে। এছাড়াও তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণ, মুসলিমদের সমর্থন, সর্বক্ষেত্রে হিন্দুদের বিরোধিতা, ভুয়া দূর্গা পূজা সরস্বতী পূজা বন্ধের উদ্যোগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হিন্দুবিরোধী আচরণ ইত্যাদি উঠে আসে একে একে। তবে তার বক্তৃতা থেকে রাজনৈতিক মহলে আবার প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিজেপি কি তাহলে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে উন্নয়নের ভাষা পুরোপুরি উপেক্ষা করতে চলেছে? তাহলে কি তারা বুঝে গিয়েছে তাদের মুখে বর্তমানে আর উন্নয়নের ভাষা শোভা দেয় না কারণ তারা উন্নয়নের নামে দেওয়া তাদের সমস্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে? সেজন্যই কি তারা শুধু সাম্প্রদায়িকতা মেরুকরণ বিভাজন এবং তথাকথিত সংখ্যালঘু ধর্ষণের বিরুদ্ধে আওয়াজ জোরদার করার মাধ্যমে আর জয় শ্রীরাম ধ্বনি প্রচার করে নিজেদের নির্বাচনী প্রচারাভিযান সম্পন্ন করতে চাইছে?

এদিনের ভাষণের শুরুতেই ‘বাংলায় জয় শ্রীরাম ধ্বনিকে নিষিদ্ধ করার চক্রান্ত চলছে’ বলে অভিযোগ করেন যোগী আদিত্যনাথ। তাঁর কথায়, “যাঁরা রামনামের বিরোধিতা করেন তাঁদের দরকার নেই এ রাজ্যে।” উঠে আসে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের কথাও। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “কেন্দ্রের মোদি সরকার বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের শরণার্থীদের জন্য নাগরিকত্ব আইন এনেছে। কিন্তু বাংলায় সেই আইনের বিরোধিতা করছে তৃণমূল সরকার।” এই আইনের বিরোধিতা কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। লাভ জেহাদ, গোহত্যা, তোষণ নিয়ে উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে বাংলার তুলনা টানেন যোগী। তবে ঠিক যে মুহূর্তে মালদা এসে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বাংলায় মহিলাদের সুরক্ষার ব্যাপারে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছেন ঠিক সেই সময়ে উত্তরপ্রদেশের হাথরসে ধর্ষিতা নারীর পিতাকে গুলি করে খুন করেছে নির্যাতিতার ধর্ষণে অভিযুক্ত এক যুবক।

তবে অনেকে বলছেন, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আপামর বাংলাবাসীর জীবনে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রত্যেকটা ধাপে মমতা সরকার যেভাবে কন্যাশ্রী শিক্ষাশ্রী সবুজ স্মৃতির মতো অসংখ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এবং নির্বাচনের ঠিক পূর্ব প্রেক্ষাপটে দুয়ারে সরকার কর্মসূচির মাধ্যমে তার চূড়ান্ত সমাপনী টেনেছে তার বিরুদ্ধে বিজেপি যে উন্নয়নের ভাষা ব্যবহার করে সুবিধা করতে পারবে না তা রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব খুব ভালভাবেই জানে, আর সেজন্যই হয়তো তারা উন্নয়ন বাদ দিয়ে সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী এবং সেই পিচেই তারা খেলতে চাইছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে রাজ্যবাসী কোন ভাষাকে নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য বেছে নেয় সেটাই এখন দেখার।

Latest articles

Related articles