
রায়গঞ্জ, ৩০ জানুয়ারি: উত্তর দিনাজপুর জেলায় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর অভাবে একের পর এক জুনিয়র হাইস্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই জেলার অন্তত ১২টি জুনিয়র হাইস্কুল কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে, এবং আরও কয়েকটি স্কুল একই পরিণতির মুখে পড়তে চলেছে। যেসব স্কুলে মাত্র একজন শিক্ষক ছিলেন, তাঁরা বদলি হয়ে যাওয়ার পর স্কুলগুলি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হাতে গোনা কয়েকজন পড়ুয়া পড়াশোনা ছেড়ে স্কুলছুট হয়ে পড়েছে।
একসময় জেলায় ২০২টি জুনিয়র হাইস্কুল চালু থাকলেও, গত কয়েক বছরে ১২টি স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। রায়গঞ্জসহ জেলার অন্যান্য ব্লকেও অনেক স্কুলে ছাত্রছাত্রী নেই বললেই চলে। নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক বিপুল মৈত্র এই সংকটের জন্য শিক্ষক ও শিক্ষিকার অভাবকে দায়ী করেছেন। তাঁর মতে, বাম আমলে ১৭০টির বেশি জুনিয়র হাইস্কুল অনুমোদন পেয়েছিল এবং পরবর্তীতে বর্তমান সরকার আরও কয়েকটি অনুমোদন দেয়। কিন্তু পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় স্কুলগুলো টিকে থাকতে পারেনি। ফলে বহু ছাত্রছাত্রী স্কুলছুট হয়ে পড়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আগে পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ করা হলেও, তা সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে পারেনি। টেনহরি জুনিয়র হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সঞ্জীবন দাস জানিয়েছেন, তাঁরা অভিভাবকদের কাছে গিয়ে পড়ুয়া ভর্তি করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানদের পড়াতে আগ্রহী নন।
এ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ভাস্কর দত্ত জানান, তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার যুগ্ম আহ্বায়ক সুব্রত সাহা আশাবাদী যে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ শুরু হওয়ায় এই সমস্যার সমাধান হবে। জুনিয়র হাইস্কুল পুনরায় চালু করার জন্য শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সত্যজিৎ বর্মনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলেও তিনি জানান।
জেলা শিক্ষা দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ছাত্রসংখ্যা কমে যাওয়ায় এর আগেও কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এবার জুনিয়র হাইস্কুলের পালা। ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে জেলায় ২০২টি জুনিয়র হাইস্কুল গড়ে উঠেছিল, কিন্তু এখন একের পর এক স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বন্ধ হয়ে যাওয়া জুনিয়র হাইস্কুলের তালিকা:
✔ সম্পূর্ণ বন্ধ: কর্ণজোড়ার কমলাবাড়ি জুনিয়র হাইস্কুল, ইসলামপুরের মালিপাড়া জুনিয়র হাইস্কুল, চাকুলিয়া আমলিয়া জুনিয়র হাইস্কুল।
✔ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ: কানকি জুনিয়র হাইস্কুল, ইসলামপুরের ভৈষভিটা জুনিয়র হাইস্কুল।
জেলা স্কুল পরিদর্শক (অ্যাকাডেমিক) সুশান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, ছাত্রসংখ্যার অভাবে বেশ কয়েকটি জুনিয়র হাইস্কুল বন্ধ হয়েছে এবং বিষয়টি সরকারের নজরে রয়েছে। এখন দেখার, কত দ্রুত এই সংকটের সমাধান হয় এবং স্কুলগুলোর দরজা আবার ছাত্রছাত্রীদের জন্য খুলে যায়।