
ওয়াশিংটন ডিসিতে পোটোম্যাক নদীর উপর আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৫৩৪২ এবং মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষে বহু হতাহতের আশঙ্কা
ওয়াশিংটন ডিসির আকাশে একটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে, আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৫৩৪২ এবং মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার পোটোম্যাক নদীর উপরে মাঝ আকাশে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষের ফলে উভয় বিমানই নদীতে বিধ্বস্ত হয়, এবং প্রাথমিকভাবে ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৫৩৪২ একটি এমব্রেয়ার ই১৯০ বিমান, যা উইচিটা, কানসাস থেকে রওনা হয়ে রোনাল্ড রেগান ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। বিমানটিতে ৬০ জন যাত্রী এবং ৪ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। অপরদিকে, ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারটিতে ৩ জন সেনা সদস্য ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিমানটি যখন অবতরণের জন্য নিচের দিকে আসছিল, তখন একটি কালো রঙের সামরিক হেলিকপ্টার হঠাৎ তার সামনে চলে আসে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এক বিকট শব্দ হয়, এবং উভয় বিমানই ধ্বংস হয়ে নদীতে পড়ে যায়।
সংঘর্ষের ফলে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বিমানটি দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিমানটির সামনের অংশটি দ্রুত পানিতে ডুবে যায়, এবং পিছনের অংশটি কিছুক্ষণ পানির ওপরে ভেসে ছিল। অপরদিকে, ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারটি উল্টে গিয়ে সম্পূর্ণরূপে নদীতে তলিয়ে যায়।
দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধার কাজ শুরু হয়। ওয়াশিংটন ডিসির দমকল বাহিনী এবং কোস্ট গার্ড সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ডুবুরিদের সহায়তায় নদীতে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তবে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উদ্ধার হওয়া কয়েকজন যাত্রীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
দুর্ঘটনার সময় কাছাকাছি একটি বোটে থাকা জন মিলার নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “আমি হঠাৎ করে আকাশে দুটি উজ্জ্বল আলো দেখতে পাই, তারপরই বিকট শব্দ হয় এবং মুহূর্তের মধ্যে দুটি বিমান পানিতে পড়ে যায়।”
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী লুসি রডরিগেজ বলেন, “আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম এটি কোনো সামরিক মহড়া। কিন্তু যখন দেখি ধোঁয়া এবং আগুন, তখন বুঝতে পারি এটি একটি সত্যিকারের দুর্ঘটনা।”
ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) এবং ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (NTSB) ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। তারা বিমান এবং হেলিকপ্টারের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধারের চেষ্টা করছে, যা সংঘর্ষের সঠিক কারণ জানতে সহায়তা করবে।
আমেরিকান এয়ারলাইন্স এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি এবং উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তা করছি।”
এই দুর্ঘটনার পর, ওয়াশিংটন ডিসির আকাশসীমায় বেসামরিক এবং সামরিক বিমানের চলাচল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কীভাবে একটি বড় বিমান এবং একটি সামরিক হেলিকপ্টার একই সময়ে একই পথে চলে এল, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে যে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিভ্রাট অথবা পাইলটের ভুলের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত কিছু বলা সম্ভব নয়।
এই দুর্ঘটনা পুরো আমেরিকাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা শোকে স্তব্ধ, এবং গোটা দেশ শোকাহত। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে পারে, যা দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উন্মোচন করবে।
এটি সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনাগুলোর একটি, যা উভয় সামরিক এবং বেসামরিক বিমান চলাচল নীতির দিকে নতুন করে নজর দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।