সুন্দরগঞ্জে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ।

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

received_266867161255406

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের চন্ডিপুর এফ হক উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের ১২০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা অধ্যক্ষ এবং শিক্ষকরা মিলে আত্বসাত করার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ওই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ছাত্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত রিপন মিয়া নামে একজন শিক্ষার্থী জেলা শিক্ষা অফিসার, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দপ্তরে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের প্রতিকার চেয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের পরপরই ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে গোপনে কাউকে না বলার শর্তে ভুক্তভোগী কয়েকজন শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে জোরপূর্বক উপবৃত্তির টাকা ফেরৎ দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
সরেজমিনে, উপজেলা চন্ডিপুর এলাকার এফ হক উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তাদের অভিযোগ, উপবৃত্তির তালিকায় তাদের নাম থাকলেও শিক্ষার্থীদের দেয়া ফোন নাম্বারের জায়গায় অন্য ফোন নাম্বার দেয়া হয়েছে। অধ্যক্ষ ও কয়েকজন শিক্ষক মিলে শিক্ষার্থীদের ফোন নাম্বার পরিবর্তন করে নিজেদের নাম্বার এবং অপরিচিত নাম্বার দিয়ে টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষসহ শিক্ষকদের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করলেও কোন সুরাহা না দিয়ে উল্টো তালবাহানা করেছেন বলে জানান তারা। আবার কোন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নাম্বার সংশোধনের কথা বলে টাকা নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী ফেরদৌস ইসলাম বলেন, উপবৃত্তির তালিকায় আমার নাম থাকলেও দুই-তিন মাস পার হওয়ার পরও টাকা না পাওয়ায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার ফোন নাম্বার পরিবর্তন করে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক তার নিজের বিকাশ নাম্বার দিয়ে টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। পরে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি টাকা না দিয়ে তালবাহানা করতে থাকেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে গোপনে তার বাড়িতে আমাকে ডেকে নিয়ে টাকা ফেরৎ দেন এবং বিষয়টি কাউকে না বলার অনুরোধ করেন।
সবুজ মিয়া নামে দশম শ্রেণির আরেক ছাত্র জানান, উপবৃত্তির খাতায় আমার নাম আছে কিন্তু আমি এখনও টাকা পাইনি। পরে খোঁজ নিয়ে দেখেছি উপবৃত্তির খাতায় আমার ফোন নাম্বারের জায়গায় অন্য একটি নাম্বার দেয়া। বিষয়টি শিক্ষককে জানালে তারা বলেন উপবৃত্তির খাতায় যে নাম্বার সেই নাম্বারে টাকা গিয়েছে। এখানে আমাদের করার কিছুই নেই। পরে নিরুপায় হয়ে সেই নাম্বারে বারবার ফোন দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন অভিভাবক জানান, উপবৃত্তির আইডি তৈরি এবং বিকাশ খোলার জন্য তিনশত করে টাকা নিয়েছেন শিক্ষকরা। তারপরেও অনেক শিক্ষার্থীর ফোন নাম্বার পরিবর্তন করে উপবৃত্তির খাতায় নিজেদের নাম্বার এবং অন্য নাম্বার বসিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন। কয়েকজন অভিভাবক মিলে অধ্যক্ষসহ প্রধান শিক্ষকের কাছে বিষয়টি জানালে টাকা পাওয়ার আশ্বাস ছাড়া কোন সমাধান পাওয়া যায়নি। তারা এ ঘটনার সঠিক তদন্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপের নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে চন্ডিপুর এফ হক উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের স্কুল শাখার দায়িত্বে থাকা সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ মিয়ার কাছে অভিযোগ সর্ম্পকে জানতে চাইলে, তিনি প্রথমে কথা বলতে রাজি না হলেও পরে জানান, আমি শুনেছি কিছু শিক্ষার্থীর ফোন নাম্বার ভূল হওয়ার কারনে তারা টাকা পায়নি পরে সেগুলো সংশোধন করে দেয়া হয়েছে। শির্ক্ষাথীদের উপবৃত্তির টাকা না পাওয়া এবং ফোন নাম্বার পরিবর্তন করা প্রসঙ্গে আমি কিছুই জানি না। বিষয়টি অধ্যক্ষ ভালো বলতে পারবে।
এ ব্যাপারে স্কুল বন্ধ থাকায় অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের বাড়িতে গেলে তার দেখা না পাওয়ায় মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার এনায়েত হোসেন মুঠোফোনে জানান, আমি অভিযোগ পেয়েছি। করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় প্রধান শিক্ষকসহ অধ্যক্ষকে মোবাইল ফোনে অভিযোগ সর্ম্পকে অবগত করেছি। স্কুল খোলার পর বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত করা হবে। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের ঘটনা প্রমানিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান এই শিক্ষা কর্মকর্তা।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর