মানব সেবার এত টাকা কোথায় পান সোনু সুদ? কত টাকার মালিক তিনি?

সাইফুল্লা লস্কর : ২০২০ সাল এবং সোনু সুদ, এদের নতুন করে পরিচয় করানোর মতো কিছু নেই। একে অপরের জন্য এবং একে অপরের সঙ্গেই ভারত তথা বিশ্ব বাসীর কাছে নয়া পরিচিতি লাভ করেছে করোনা ভাইরাসের আগমনকালে। এখনও পর্যন্ত বলিউড এবং দক্ষিণ ভারতের অনেক ফিল্মে অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। কিন্তু করোনা আবহে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যে পরিমাণ সম্মান ভালোবাসা এবং পরিচিতি তিনি লাভ করেছেন তার ক্ষুদ্র অংশও তিনি পাননি নিজের ফিল্মি কেরিয়ারের কারণে। গত বছর মার্চ মাসে যখন সারা ভারতে হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা করে কেন্দ্রের মোদি সরকার তখন জীবিকার সন্ধানে দেশের বিভিন্ন অংশে পাড়ি দেওয়া বহু মানুষ আটকে পড়েন মুম্বাই দিল্লির মতো শহরে। সেই সময় মুম্বাইয়ে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। প্রতিদিন ৪৫,০০০ এর বেশি শ্রমিককে খাদ্য এবং পানীয় জলের যোগান দেওয়ার উদ্যোগ করেছিলেন সোনু। প্রায় ২০,০০০ এর বেশি মানুষকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা নিয়ে তাদের জন্য মসিহা হয়ে উঠেছিলেন।

 

সেই শুরু তারপর থেকে সাধারণ মানুষের বিপদের সময়ে বার বার এগিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে করোনা কালের মসীহা রূপে অবতীর্ণ হওয়া এই অভিনেতাকে। কখনো করোনা যোদ্ধাদের জন্য নিজের হোটেলের দরজা খুলে দেওয়ার কারণে, কখনো বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের দেশে ফিরিয়ে। আবার কখনো তিনি এগিয়ে এসেছেন করোনার আঘাতে কাজ হারানো ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়ে আবার কখনো ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে। সাধারণের সর্ব ক্ষণের বিশ্বস্ত সাথী এই অভিনেতার টিমের কাছে দৈনিক ৫০,০০০ এর বেশি ফোন কল যায় সাহায্যের আর্তি নিয়ে। তিনি তার ব্যক্তিগত পরসরে সাধ্যমত চেষ্টা ও করেন সবাইকে যথাসম্ভব সাহায্য করতে। তবে এত ব্যাপক মাত্রায় কিভাবে তিনি সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতে পারেন এবং ব্যাপক আকারে মানবতার সেবার জন্য প্রয়োজনীয় এই বৃহৎ অঙ্কের অর্থের যোগান বা কথা থেকে আসে সে ব্যাপারে অনেকের মাঝে কৌতুহলের শেষ নেই। অনেকে আবার বলেন এর মধ্যে কোনো আর্থিক কেলেঙ্কারির গল্প থাকতে পারে। তবে সোনু সুদ এই সন্দেহের কথা শুনে বলেন, তাদেরকে অপপ্রচার চালাতে দিন আমি মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলেই খুশি। তবে তার এই বিশাল অংকের অর্থের যোগান আসে কথা থেকে তা নিয়ে খোঁজ খবর করলে দেখা মেলে বিভিন্ন উৎসের।

 

প্রথমত তিনি বর্তমানে দক্ষিণের সিনেমা জগতে এবং বলিউডের অভিনয় জগতের একটা পরিচিত এবং প্রতিষ্ঠিত নাম। প্রতিটা সিনেমাতে তিনি ২ কোটি টাকা পারিশ্রমিক নেন বলে শোনা যায়। এছাড়া তিনি বহুদিন মডেলিং করেছেন। যুক্ত আছেন বহু নামিদামি ব্র্যান্ডের সঙ্গেও। তিনি এবং তার পরিবার বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত রয়েছে বলে তিনি জানান। তার একটি হোটেল আছে মুম্বাইয়ের জুহু এলাকায়। তার বাবার নামে রয়েছে একটি প্রোডাকশন হাউস। যার নাম শক্তি সাগর প্রোডাকশন। ২০২০ সালের হিসেবে সোনু সুদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলার যা ভারতীয় মূল্যে প্রায় ১২৭ কোটি টাকা। সেই অর্থের সাহায্যেই তিনি জনসেবা করেন বলে তার ঘনিষ্ট মাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে।

 

এছাড়াও তার বলিউডে বহু পরিচিত এবং বন্ধু আছে যাদের থেকে প্রয়োজনে বিভিন্ন সাহায্য নেন তিনি। তার মানবতার কর্ম যজ্ঞে সামিল হতে তার ফান্ডে দান করেন বহু দাতা। এটা তিনি নিজেও জানিয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তার অর্থের অভাব দেখা দেওয়ায় ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি বন্ধক দেন। প্রবল প্রতিবন্ধকতা সত্বেও যেভাবে দেশের বহু ধনাঢ্য বিলিয়নিয়ারের থেকে বেশি দানশীলতা এবং বৃহৎ হৃদয়ের পরিচয় তিনি দিয়েছেন তাতে একটা কথাই বলা যায়, দান করার জন্য অনেক অর্থ নয়, প্রয়োজন একটা মানবদরদী হৃদয়।

Latest articles

Related articles