চলে গেলেন পায়ে হেঁটে হজ্ব পালন কারি হাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন , ১১৫ বছর বয়সে

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

hiji mohiuddin 115

এনবিটিভি ডেস্ক : হেঁটে পবিত্র হজব্রত পালন করা দিনাজপুরের মরহুম হাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। রবিবার (১০ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১২টায় তিনি দিনাজপুর সদর উপজেলার ৯নং আস্করপুর ইউপির খসরুর মোড়ের মেয়ের বাড়িতে ইন্তেকাল করেন।

ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী তার বয়স হয়েছিল ১১৫ বছর। তিনি দুই ছেলে, চার মেয়ে, নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সোমবার বাদ জোহর দুপুরে রামসাগর বায়তুল আকসা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে মরহুমের নামাজে জানাজা শেষে নিজ বাড়ি দীঘিপাড়ার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের নাতি হাফেজ মো. মুরসালিন হাসান। মরহুমের নামাজে জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

মরহুম হাজী মহিউদ্দিন ১৯০৬ সালে ১০ আগস্ট দিনাজপুর সদর উপজেলার ৯ নম্বর আস্কপুর ইউনিয়নের রামসাগর দীঘিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার জাতীয় পরিচয়পত্রে (আইডি কার্ড) দেখা যায় জন্ম তারিখ ১০ আগস্ট ১৯০৬ সাল। সে হিসাবে তার বয়স হয়েছিল ১১৫ বছর ২ মাস ১ দিন।

তিনি দীর্ঘদিন দিনাজপুরের ঐতিহাসিক রামসাগর জাতীয় উদ্যানের বায়তুল আকসা জামে মসজিদে ইমামতি করেছেন।
১৯৬৮ সালে পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে হেঁটে দিনাজপুর থেকে রওনা দেন তিনি। পায়ে হেঁটে হজ করতে যেতে-আসতে তার সময় লেগেছিল মোট ১৮ মাস। এই ১৮ মাসে তিনি পাড়ি দেন কয়েক হাজার কিলোমিটার পথ। এ সময়ে তিনি সফর করেন ৩০টি দেশ। যে দেশগেুলো তিনি সফর করেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুখস্ত বলতে পারতেন সেসব দেশের নাম।

ওই সময়ে হজে যেতে পাসপোর্ট ও ভিসা করতে তার খরচ হয় ১২০০ টাকা। আর্থিক সার্মথ্য না থাকলেও অদম্য ইচ্ছা নিয়ে আর এলাকাবাসীর সহায়তায় হেঁটেই হজ করতে যান তিনি। কখনও হেঁটে, কখনও জাহাজে, আবার কখনও স্থানীয় যানবাহনে চড়ে ৩০টি দেশ ঘুরে তিনি পৌঁছান প্রিয় নবীজির পবিত্র ভূমি মক্কা-মদিনায়।

আধুনিক যুগে আমরা নানান আবিষ্কার দেখছি। বিংশ শতকে হজ্ব পালনের জন্য ফ্লাইট এর ব্যবস্থা না থাকলেও, আবেগ ও ভালোবাসার টানে পায়ে হেঁটে হজ্ব পালন করে নজির স্থাপন করেছিলেন হাজী মোহাম্মদ মহউদ্দিন।ইসলামে জীবনে একবার হজ্ব পালন করা প্রত্যেক মুসলিম ধনবান ব্যাক্তির জন্য অবশ্য কর্তব্য। তাই আমরা প্রতি বছর হাজারো মানুষের সমাগমের খবর পেয়ে থাকি।

তার জীবদ্দশায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি শুনিয়েছিলেন তার সেই হজে যাওয়ার ভ্রমণকাহিনী। তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে প্রথমে ঢাকায় যাই, তারপর পতেঙ্গা পৌঁছাই। পতেঙ্গা থেকে জাহাজে সিংহল (শ্রীলঙ্কা) হয়ে পাকিস্তান যাই। এরপর একে একে আফগানিস্তান, ইরান, কুয়েত, ইরাক, জর্দান, মিসরসহ মোট ৩০ দেশ ঘুরে সৌদি আরব পৌঁছাই। সেখানে মক্কা হয়ে সর্বশেষে দেখা পেলাম মদিনার। মদিনায় পৌঁছে তিন মাস খাদেমের সঙ্গে থেকেছি। খাদেমের নাম ছিল ইসমাইল।
এলাকাবাসীর মতে, বর্তমানে এই এলাকায় তার বয়সী কোনো মানুষ আর বেঁচে নেই। তিনিই সবচেয়ে বেশি বয়সী মানুষ ছিলেন। তিনি খুব ভালো ও পরোপকারী মানুষ ছিলেন।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর