Wednesday, June 11, 2025
29 C
Kolkata

সামনেই পৌষপার্বণ, তাই মাটির সরা বানাতে ব্যস্ত দিনাজপুরের মৃৎশিল্পীরা

এনবিটিভি,দক্ষিণ দিনাজপুর: নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয় সরে গিয়ে অবশেষে বাংলা জুড়ে শুরু হয়েছে শীত। সকাল অথবা রাত পর্যন্ত শীত অনুভব করছেন আবালবৃদ্ধবনিতা। আর এই শীত মানেই নলেন গুঁড়ের মিষ্টি সুবাস। শীত মানেই পিঠে-পায়েস। আর পিঠে পায়েসের উত্‍সব মানেই পৌষ পার্বণ। পৌষ পার্বণের দিন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। কয়েকদিন ধরেই চরম ব্যস্ততায় নাওয়া-খাওয়া প্রায় ভুলেই গিয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মৃৎশিল্পীরা। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের অন্যতম পার্বণ হল পৌষপার্বণ।

‘মাসিমা মালপোয়া খামু’৷ বাংলা সিনেমায় এই বিখ্যাত প্রবাদ যা প্রতিটি বাঙালি বাড়ির অন্দরমহলের অন্তর্নিহিত কথা সেই সময় সিনেমায় প্রকাশ পেয়েছিল। এখনও শীতের সময়টাতে প্রতিটি বাঙালিকে পিঠে পুলির উত্‍সব অর্থাত্‍ পৌষ পার্বণ উত্‍সবে মেতে উঠতে দেখা যায়।

ব্যস্ত মৃৎশিল্পী।

পূর্বে শহর থেকে গ্রাম একান্নবর্তী পরিবার ছিল সর্বত্রই। ঠাকুরমা, মাসিমা, দিদিমারা প্রতি বছর শীত পড়তেই ঢেঁকিতে চালের গুঁড়া তৈরি করে রৌদ্রে শুকিয়ে তা কৌটোযাত করতেন। আর পৌষ পার্বণের দিনে বাড়ির মহিলারা সকাল থেকেই গোটা বাড়ি গোবর দিয়ে লেপে সুন্দর সুন্দর আলপনা আঁকতেন । দুপুর হতে না হতেই চালের গুঁড়োর সাথে চিনি অথবা নলেন গুড় অর্থাত্‍ খেজুরের গুড় মিশিয়ে পিঠে পুলি তৈরির উপকরণ তৈরি করে ফেলতেন। পৌষ সংক্রান্তির দিন সন্ধে হতেই গৃহস্থ বাড়িতে শুরু হয়ে যেত রকমারী পিঠে পুলি বানানোর কাজ।

 

এই পিঠে পুলি তৈরি করতে প্রয়োজন মাটির তৈরি সরা। এটি তৈরি করতে বেশ কয়েকদিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম যাচ্ছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পাল পাড়ার মৃৎশিল্পীরা। শীতের শৈত্য প্রবাহকে উপেক্ষা করে এঁটেল মাটির সাথে প্রয়োজন মতো জল মিশিয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে সেই মাটিকে মাখিয়ে সরা তৈরির উপযোগী করে তোলা হয়। এরপর নরম মাটিকে সাঁচে ফেলে বিভিন্ন আকৃতির সরা তৈরি করা হয়। কোনও সরার নাম এক খুঁটির সরা আবার কোনটা সাত খুঁটির সরা। প্রতিটি সরার জন্য একটি করে মাটির ঢাকনাও তৈরি করেন মৃৎশিল্পীরা। চলতি ভাষায় এটি ঢাকন নামে পরিচিত। এরপর সেই সরাগুলিকে রৌদ্রে শুকিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়।

তারপর সেগুলিকে একটি একটি করে বাছাই করে তা পাইকারি ও খুচরো হিসেবে বিক্রি করা হয়। আকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের সরা-সহ ঢাকনার দামও বিভিন্ন রকম হয়। মৃৎশিল্পী লক্ষ্মী পাল, কল্পনা পালরা জানান, শীতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সরা, ঢাকন তৈরি করলেও এখন আর আগের মত সরা-ঢাকনের চাহিদা নেই। কারণ বর্তমানে শীতের দিনগুলিতে হাটে-বাজারে পিঠে-পুলি বিক্রি হয়। বর্তমানে বাড়িতে পিঠে পুলি বানানোর ঝক্কি নিতে চাননা অনেকেই।

মৃত্‍ শিল্পী দীনেশ পাল, দেবেন্দ্র পালরা জানান, ‘সরা, ঢাকন বিক্রি আগের থেকে অনেক কমে গেছে। তার উপর মাটি সহ জ্বালানী খরচ বাড়লেও সেই অনুপাতে সরা, ঢাকনের দাম পাওয়া যায় না। বাপ ঠাকুরদার ব্যবসা ঠিকিয়ে রাখতে আমরা এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে থাকলেও নতুন প্রজন্ম এই পেশা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে’।

Hot this week

পানিহাটিতে স্কুটি চালককে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মার তৃণমূল কাউন্সিলারের

রাজ্যে ফের তৃণমূলের দাদাগিরি। এবার উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটি...

আমেরিকার বিমানবন্দরে ভারতীয় পড়ুয়াকে চরম হেনস্থা করল ট্রাম্প সরকার, প্রশ্নের মুখে মোদির বিদেশনীতি

আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের পদে আসা মাত্র ভারতীয় নাগরিকদের...

ইলিশ কেনার নাম করে ব্যবসায়ীকে খুন, গ্রেপ্তার ২ অভিযুক্ত

গ্রীষ্মের দাবদাহ এখনো কমেনি বটে, তবে আসন্ন বর্ষাকালে বাঙালির...

Topics

পানিহাটিতে স্কুটি চালককে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মার তৃণমূল কাউন্সিলারের

রাজ্যে ফের তৃণমূলের দাদাগিরি। এবার উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটি...

ইলিশ কেনার নাম করে ব্যবসায়ীকে খুন, গ্রেপ্তার ২ অভিযুক্ত

গ্রীষ্মের দাবদাহ এখনো কমেনি বটে, তবে আসন্ন বর্ষাকালে বাঙালির...

ইউক্রেনের উপর ৫০০ টি ড্রোন ও ২০টি মিসাইল নিক্ষেপ করল রাশিয়া, ধ্বংস একাধিক শহ

রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। ইউক্রেনের...

চূড়ান্ত অভাব-অনটনের মধ্যে থেকেও WBSC পরীক্ষায় ভালো ফল করলেন মুর্শিদাবাদের আরিফ মন্ডল

লক্ষ্য স্থির রেখে কঠিন অধ্যাবসায় ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে...

গ্রুপ ডি কর্মী থেকে ডব্লুবিসিএস অফিসার! বেলপাহাড়ির কবীন্দ্রর সাফল্যে গর্বে ভাসছে গোটা গ্রাম

ঝাড়গ্রামের প্রত্যন্ত বেলপাহাড়ি অঞ্চলের আদিবাসী যুবক কবীন্দ্র হাঁসদা ডব্লুবিসিএস...

Related Articles

Popular Categories