গণতান্ত্রিক রাজতন্ত্র

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

image-20

~পাশারুল আলম

গণতন্ত্র গণতন্ত্র করে আমরা খুব গর্ববোধ করি । একজন নাগরিক হিসেবে গণতন্ত্র বিষয়ে গর্ববোধ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কিন্তু আজকাল ভারতবর্ষ তথা সমগ্র বিশ্বে যে গণতন্ত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই গণতন্ত্র যে সঠিক গণতন্ত্র নয়, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যারাই বা যেই দলে ক্ষমতায় আসে তারা নিজেদেরকে রাষ্ট্র ভাবতে শুরু করে দেয় এবং মনে করে তারা এ যুগের রাজা। তাদের মধ্যে এসে যায় রাজকীয় ভাব। আজকের দিনে যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলছে তাতে রাজা হয়ে গেছে শাসক। এই শাসকের নাগপাশ থেকে বের হওয়ার জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই প্রগতিশীল মানুষ আপন করে নিয়েছিল। কিন্তু গণতন্ত্রকে উন্নততর না করে শাসক গোষ্ঠী গণতন্ত্রকে নিজেদের মত করে কুক্ষিগত করে নিয়েছে। এই কুক্ষিগত করার ফলে এক একজন জনপ্রতিনিধি নিজেদেরকে গণতান্ত্রিক রাজা হিসেবে উপস্থিত করছে। একবার কারো হাতে ক্ষমতা চলে গেলে অসৎ মানুষ, অবৈধ অর্থ, গদি মিডিয়া ও অগণিত মাফিয়া দ্বারা নিজের শাসন ক্ষমতাকে স্থায়ী রূপে ধরে রাখছে। এই ধরে রাখাকে জনপ্রতিনিধিরা গণতান্ত্রিক জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রচার করে যাচ্ছে।

আজকের দিনে আমি হই বা অন্য কেউ যদি রাজতন্ত্রের স্বপক্ষে কিছু বলে থাকে, তাহলে তাকে ব্যাকডেটেড বলা হবে। আজকের জনপ্রতিনিধি ও মন্ত্রিসন্ত্রীদের যে কাণ্ডকারখানা তা সে রাজ্যে হোক বা কেন্দ্রে হোক, সবাই নিজেকে রাজা ভাবতে শুরু করেছে, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান রাজতন্ত্র ও অতীতের রাজতন্ত্রের মধ্যে যদি তুলনামূলক আলোচনা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে,। পুরনো রাজতন্ত্রে একজন শাসক ছিলেন মাথায়। তিনি শোষণ করতেন, বিলাসী জীবন যাপন করতেন, প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতেন এবং একের পর এক প্রয়োজনীয় কিংবা প্রয়োজনীয় ব্যয় করতেন। সেই ব্যয় কখনো প্রজাহিতৈষীতে ব্যবহার হতো আবার কখনো তার নিজস্ব কীর্তিকে অমর করার চেষ্টা করত। কিন্তু আজকের দিনে রাজারা শোষণ এবং বঞ্চনা করে। এই শোষণ হয়ে যায় তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। রাজার যুগে শোষিত অর্থ এক পুরুষ দুই পুরুষ পরে আবার রাষ্ট্রের হয়ে যেত। এ যুগে কোথাও কোন অন্যায় বা অবিচার হলে তার বিচার পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কেঁদে চলে যায়। আজকে যখন টিভির পর্দায় নানান গল্প কেচ্ছা শুনি, এই গল্প কেচ্ছা ইতিপূর্বেও আমরা বহু শুনেছি বহু দেখেছি। কিন্তু কারো কোন বিচার হয়েছে? কেউ বিচার পেয়েছে? যদি কেউ পেয়ে থাকে তার সংখ্যা অতি নগণ্য। মধ্যযুগীয় রাজার আমলে কোন অন্যায় অবিচার হলে রাজা সঙ্গে সঙ্গে বিচার করে তার সাজা শুনিয়ে দিতেন। অবশ্যই তা রাজার চোখে অপরাধ বলে বিবেচিত হতে হত। আজকের দিনে যে সমস্ত দুর্নীতি গণতান্ত্রিক রাজারা করে চলেছেন। মধ্যযুগের রাজাদের আমলে এই সমস্ত দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রীদের কি শাস্তি হত আপনারা তারা অনুমান করতেই পারেন। তাই বহু মানুষ গণতন্ত্রের পক্ষে মত দেয়নি আজকের দিনের এই গণতন্ত্রের পক্ষে মত দেওয়া সত্যিই কঠিন হয়ে পড়েছে আবার মধ্যযুগীয় রাজতন্ত্র কামনা করা আর এক বোকামী। আসলেই সেদিনও প্রজা সাধারণ শোষিত বঞ্চিত ছিল আজকের দিনেও প্রজা সাধারণ শোষিত বঞ্চিত। সত্যিই যদি গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হয় এবং গণতান্ত্রিক রাজাদেরকে পরাজিত করতে হয় তাহলে গণতন্ত্র বিষয়ে নতুন করে গবেষণা পদ্ধতি ফর্মুলা বের করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর