মারওয়ান বারঘুতি মুক্তির দাবিতে আলোচনা: ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন সম্ভাবনা?
ইসরায়েলের প্রাক্তন মোসাদ প্রধান এফ্রাইম হালেভির সাম্প্রতিক বক্তব্য ফিলিস্তিনি নেতা মারওয়ান বারঘুতির মুক্তির দাবিকে আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। হালেভি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে বারঘুতিকে মুক্ত করে তার সাথে শান্তি আলোচনা শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন। এই প্রস্তাবনা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ।
কেন বারঘুতির মুক্তি প্রয়োজন?
১. রাজনৈতিক সঙ্গতির অভাব: হালেভি উল্লেখ করেছেন, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস (৯০) বয়স ও দুর্বল নেতৃত্বের কারণে কার্যকর আলোচনার অংশীদার নন। বারঘুতির মুক্তি ফিলিস্তিনি পক্ষে একটি দক্ষ নেতৃত্ব তৈরি করতে পারে ।
২. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: হালেভি ইসরায়েলের অতীত নেতাদের উদাহরণ টেনে বলেছেন, যারা একসময় “সন্ত্রাসী” তালিকায় থাকলেও পরবর্তীতে শান্তি প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রেখেছেন। তার মতে, বারঘুতিকেও এমন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা উচিত ।
৩. হিব্রু ভাষায় দক্ষতা ও জনপ্রিয়তা: বারঘুতি হিব্রু ভাষায় সাবলীল, যা সরাসরি আলোচনাকে সহজ করতে পারে। এছাড়া, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা তাকে একটি সমঝোতামূলক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে ।
২০০২ সালে গ্রেপ্তার হওয়া বারঘুতি ফাতাহ আন্দোলনের প্রভাবশালী নেতা এবং তানজিমের সশস্ত্র শাখার প্রতিষ্ঠাতা। দ্বিতীয় ইন্তিফাদায় তার ভূমিকার জন্য ইসরায়েলি আদালত তাকে ৫টি যাবজ্জীবন সাজা দেয় ।
কারাগার থেকেই তিনি অহিংস প্রতিরোধ ও ফিলিস্তিনি ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। ২০০৬ সালের “বন্দী নথি” (Prisoners’ Document) প্রণয়নে তার ভূমিকা ফাতাহ, হামাস ও ইসলামিক জিহাদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিল ।
অনেক ফিলিস্তিনি তাকে “ফিলিস্তিনি ম্যান্ডেলা” বলে অভিহিত করেন। দীর্ঘ কারাবাস ও দুর্নীতিমুক্ত ইমেজ তার জনপ্রিয়তার মূল কারণ ।
নেতানিয়াহু সরকার বারঘুতির মুক্তিকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে আখ্যায়িত করেছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, তার মুক্তি সন্ত্রাসকে বৈধতা দেবে এবং হামাসের রাজনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখা হবে ।
মিশর, কাতার ও তুরস্কের মতো রাষ্ট্রগুলি ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। তাদের যুক্তি, বারঘুতির মুক্তি ফিলিস্তিনি রাজনীতিকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে ।
হামাস দ্বিতীয় ধাপের বন্দী বিনিময়ে বারঘুতির মুক্তি নিশ্চিত করতে চাইছে। গাজা ও পশ্চিম তীরে তাদের জনসমর্থন বাড়ানোর এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ ।
ইসরায়েলি মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, হামাস বারঘুতির মুক্তির জন্য চাপ দিলেও ইসরায়েল তাকে বিদেশে নির্বাসনের পরিকল্পনা করছে (সম্ভাব্য গন্তব্য তুরস্ক) ।
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচের মতো ডানপন্থী নেতারা গাজায় সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু না হলে জোট সরকার ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারঘুতির মুক্তির বিরোধিতা করলেও কাতার ও মিশর শান্তি আলোচনায় তৃতীয় পক্ষ হিসেবে সক্রিয় ।
ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠন শিকার্ত হাদিনের প্রধান নিতসানা দর্শন-লাইটনার বলেছেন, বারঘুতির মুক্তি “সন্ত্রাসের জন্য ক্ষমা”র সমতুল্য এবং এটি হামাসের হাত শক্তিশালী করবে ।
সম্প্রতি এক সমীক্ষায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৬৪% ফিলিস্তিনি বারঘুতিকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে পেতে চান, যা আব্বাসের জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে গেছে ।
মারওয়ান বারঘুতির মুক্তি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। যদিও ইসরায়েলের বর্তমান সরকার এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে, তবুও হালেভির মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কণ্ঠ এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের চাপ ভবিষ্যতে পরিস্থিতি বদলাতে সক্ষম। ফিলিস্তিনি ঐক্য ও শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে বারঘুতির ভূমিকা হতে পারে যুগান্তকারী, কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন ইসরায়েলি রাজনীতিতে সাহসী সিদ্ধান্ত এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলির সমন্বিত প্রচেষ্টা।