করোনা ডেঙ্গি পর্ব কাটিয়ে এবার জলবসন্তের হানায় মৃত্যুর স্ংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসা মহল।এই রোগে এ বার বয়স্করাই সব চেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।তাই শুক্রবার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন।সংক্রামক ওই রোগের চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র হচ্ছে আইডি।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, জানুয়ারিতে মৃতের সংখ্যা সবথেকে বেশী।গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি, এই তিন মাসে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। আবার, গত ১ নভেম্বর থেকে এ দিন পর্যন্ত ওই হাসপাতালে ভর্তি জলবসন্তে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৮। শেষ তিন মাসে যে ক’জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের ৫০ শতাংশের বয়স পঞ্চাশের উপরে। তাঁদের মধ্যে পুরুষ ৭৫ শতাংশ এবং মহিলা ২৫ শতাংশ।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, যে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের ৬০ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, ক্যানসার, সিওপিডি, হেপাটাইটিস-বি, ডায়াবিটিস, ইমিউনোসাপ্রেসিভ থেরাপি, হৃদ্রোগের মতো কোমর্বিডিটি ছিল। এ ছাড়া, এসএসকেএম ও এম আর বাঙুর থেকে দু’জন রোগী আইডি-তে এসেছেন একেবারে শেষ সময়ে। হাসপাতালে আসার কিছুক্ষণ পরেই তাঁদের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশেরই ভর্তির সময়ে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কম ছিল। আর যত জন ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের ৫০ শতাংশ আক্রান্ত হওয়ার ৪ থেকে ৭ দিনের মধ্যে হাসপাতালে এসেছেন।
•জলবসন্তের লক্ষণ
শুরুর দিকে শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, মাথাব্যথা করা, গা-হাত-পা ব্যথা করা এমনকি পিঠেও ব্যথা হতে পারে। একটু সর্দি-কাশিও হতে পারে। এরপর জ্বর জ্বর ভাব হবে। এগুলো রোগের পূর্ব লক্ষণ। এরপর শরীরে ঘামাচির মতো কিছু উঠতে দেখা যায়। তারপর সেটা একটু পর বড় হতে থাকে এবং ভেতরে পানি জমতে থাকে। খুব দ্রুতই শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। আর এভাবে জলবসন্ত হয়ে গেলে রোগীর অনেক জ্বর আসবে। শরীরে প্রচন্দ ব্যাথা অনুভুত হবে আর সঙ্গে সর্দি-কাশিও থাকবে।
মূলত সব ঋতুতে এ রোগ কম-বেশি হলেও শীতের শেষে ও বসন্তকালে তা মহামারী আকার ধারণ করে। চিকেনপক্স বা জলবসন্ত অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। ভেরিসেলা জোস্টার নামক এক ধরনের ভাইরাস এ রোগের কারণ। এ রোগের প্রথম বিবরণ পাই আমরা ৯০০ শতাব্দীতে।
তখন এটাকে এক ধরনের শান্ত প্রকৃতির গুটিবসন্তই বলা হতো। কিন্তু ১৭৬৫ সালে ভোগেল এটার নামকরণ করেন ‘ভেরিসেলা’। ১৭৬৬ সালে মরটেম এর নাম দেন ‘চিকেনপক্স’।
১৯৬৭ সালে হেবারডেন গুটিবসন্ত বা স্মলপক্সের সাথে চিকেনপক্সের পার্থক্য স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এক সম্মেলনে ঘোষণা দেয় পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল হয়েছে স্মলপক্স। কিন্তু চিকেনপক্স নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।
•কীভাবে এ রোগ ছড়ায়?
১. চিকেনপক্সে আক্রান্ত রোগীর হাঁচি ও কাশি থাকে।
২. আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলে।
৩. আক্রান্ত রোগীর ব্যবহূত জিনিস স্পর্শ করলে।আক্রান্ত রোগীর নিঃশ্বাসের বাতাস থেকে।
৪. আক্রান্ত রোগীর কাছাকাছি অবস্থান করলে সেখানকার বাতাসের মাধ্যমে।
৫. আক্রান্ত রোগীর শরীরে ফুসকুড়ি ওঠার পাঁচ দিন আগে থেকে এবং ফুসকুড়ি শুকিয়ে যাওয়ার ছয় দিনের মধ্যে কেউ সংস্পর্শে এলে। মনে রাখতে হবে ভেরিসেলা ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার সাথে সাথে উপসর্গ দেখা দেয় না। সাধারণত ১৪-২১ দিন (মোটামুটিভাবে ১৭ দিন) পর্যন্ত রোগটি শরীরে সুপ্তাবস্থায় থাকে। পরে ধীরে ধীরে উপসর্গ দেখা দেয়।