সর্বভারতীয় (ইউপিএসসি) পরীক্ষায় অবিশ্বাস্য সফল কাহিনী কেরালার এক ‘কুলি’র

এনবিটিভি ডেস্কঃ   আজকের ক্যারিয়ারমুখী বিশ্বে সবাই স্বপ্ন পূরণের প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত। একইভাবে শ্রীনাথ কে কেরালার একজন কুলি। তিনি একজন সরকারী কর্মচারী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। শুধুমাত্র তার স্বপ্নই পূরণ করেননি বরং  ইউপিএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য অনেক প্রার্থীর জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। তার সাফল্যের গল্পটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তিনি শুধুমাত্র তার কঠোর পরিশ্রম এবং অদম্য অদ্ধাবসার সাথে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি। বরং তিনি কোন বই এবং প্রাইভেট টিউটর ছাড়াই সফল হয়েছেন।

আইএএস শ্রীনাথ কে-এর সাফল্যের পিছনের গল্পটি অবিশ্বাস্য এবং চিত্তাকর্ষক এক ঘটনা রয়েছে।

শ্রীনাথ কেরালার মুন্না এলাকার বাসিন্দা। তিনি কেরালার এর্নাকুলামে কুলি হিসেবে কাজ করতেন। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য এবং রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের লাগেজ ও ব্যাগ বহনের কাজ করতেন। তিনি তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন।

২০১৮ সালে ২৭ বছর বয়সে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার যৎসামান্য উপার্জিত আয় পরিবারের জন্য যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে তখন তার এক বছরের মেয়ে ছিল, তাই তাকে ভবিষ্যতের খরচ এবং সঞ্চয়ের কথাও ভাবতে হয়েছিল। তিনি মনে প্রানে চাননি যে, তার ছোট মেয়ে তার অল্প উপার্জনের কারণে জীবনে কষ্ট পাক। এই ভাবে নিজের সমস্যাকে এক চ্যালেঞ্জর সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় তিনি।  

সেজন্য তিনি রাতেও উপার্জন করতে শুরু করেছিলেন। দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় মাত্র। এর পরেও নিজের পরিবারের ভরণপোষণের সময় কঠিন হয়ে পড়তে থাকে। কেননা সে সর্বদা তার পরিবারকে আরও ভাল জীবনযাপনের জন্য যত্নশীল।

একদিন তার মাথায় আসে সিভিল সার্ভিসের জন্য আবেদন করার। কিন্তু সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার কারণে তিনি বেশি টাকা খরচা করে টিউটর ফি এবং পড়াশোনার উপকরণ বহন করতে পারেননি। একমাত্র তার সেল ফোনের উপর নির্ভর করে সফলতার শিখরে পৌঁছানোর একমাত্র মাধ্যম। আর সে সেই সেল ফোনকে কাজে লাগিয়েছে।  

গত ২০১৬ সালে সরকার মুম্বাই কেন্দ্রীয় রেলওয়ে স্টেশনে বিনামূল্যে ওয়াইফাই পরিষেবা সরবরাহ করেছিল। এটি শ্রীনাথের উচ্চাকাঙ্ক্ষা অর্জনে এবং সিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য একটি দুর্দান্ত সুযোগ হিসাবে এসেছিল। তিনি অধ্যয়ন এবং কঠোর পরিশ্রম করতে পছন্দ করতেন এবং তার এই মানসিকতা তাকে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছিল।

ফ্রি ওয়াইফাই এর সাহায্যে শ্রীনাথ রেলওয়ে স্টেশনে কাজ করার সময় অনলাইন বক্তৃতা শুনতে ব্যবহার করতেন। বই এবং পড়াশোনার সামগ্রিক কেনার জন্য অর্থ ব্যয় করার পরিবর্তে তিনি একটি স্মার্টফোন, একটি মেমরি কার্ড, এক জোড়া ইয়ারফোন এবং বিনামূল্যের ওয়াইফাই সবই ছিল তরুণ কুমারের লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস।

তার কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার সাথে তিনি কেরেলা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (কেপিএসসি) লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

শ্রীনাথ শুধুমাত্র একটি চাকরির জন্য আকাঙ্ক্ষা করছিলেন যা তাকে একটি যুক্তিসঙ্গত আয়ের মাধ্যমে তার পরিবারকে আরও ভালভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে এবং তার গ্রামে উন্নতি আনতে তাকে কিছু শক্তি দিয়ে ক্ষমতায়িত করতে পারে। তিনি সরকারের ভূমি রাজস্ব অধিদপ্তরে গ্রামীণ সহকারী হিসেবে চাকরি পেতে চান।

Latest articles

Related articles