বেডস আয়োজিত বেগম রোকেয়া জন্ম বার্ষিকী অনুষ্ঠান বারাসাতে

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG-20201220-WA0011

এনবিটিভি ডেস্ক: বেগম রোকেয়ার জন্ম বার্ষিকী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের রাজ্য সভাপতি আমিন ইসলাম, রাজ্য সম্পাদক, শিক্ষক শাজাহান মন্ডল, নাজিরা খাতুন, প্রত্যাশার চ্যারিটেবল ট্রাস্টের কর্ণধার নাজিবুল্লাহ, শিক্ষক মাসুদুর রহমান, সায়নী মিত্র, “বেগম রোকেয়া সম্মান” প্রাপ্ত তালসা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা আম্মাতুর রাশিদা, আয়নুল হক, দীপা ঘোষ, সেখ আজহারউদ্দীন, রিয়াজুল ইসলাম, জাহিরুল হাসান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক সিরাত সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার এন্ড এডুকেশনাল ট্রাস্টের রাজ্য সম্পাদক, বিশিষ্ট শিক্ষক আবু সিদ্দিক খান, তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাঙালি সমাজ যখন অনৈইসলামি ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতা আর সামাজিক কুসংস্কারের বেড়াজালে আচ্ছন্ন ছিল, ঠিক সেইসময় বেগম রোকিয়া বাংলার মুসলিম নারী সমাজে শিক্ষার অগ্রদূত হয়ে এসেছিলেন। বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে এক রক্ষণশীল সম্ভ্রান্ত সাবের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জহির উদ্দিন আবু আলী সাবের, মাতা রাহাতুন্নেসা চৌধুরানী, তাঁর দুই ভাই দুই বোন ছিল। দুই ভাই মোহাম্মদ ইব্রাহিম আবুল আসাদ এবং খলিলুর রহমান, দুই বোন কারিমুন্নেসা খানম ও হুমায়রা খানাম। দুই ভাই সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন রোকেয়ার বাংলায় হাতে খড়ি তাঁর বড়দিদির কাছে। এবং ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য বড় ভাই ইব্রাহিমের অনুপ্রেরণা, উৎসাহ পায়। ১৮ বছর বয়সে ১৮৯৮ সালে বিহারের ভাগলপুরে উচ্চশিক্ষত সাখাওয়াত হোসেনের সাথে বিবাহ হয়। স্বামীর পৃষ্ঠপোষকতায় রোকেয়া ইংরেজিতে পারদর্শী হন। রোকেয়া দুই সন্তানের মা হয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যবশতঃ একজন চার মাস, অন্যজন পাঁচ মাস বয়সে মারা যান। শুরু হয় এক নতুন নিঃসঙ্গ জীবন যাত্রা। বেগম রোকেয়ার অন্যান্য কৃতিত্ব সংবাদ পত্রে দেখা যায় তিনি ১৯০২ সালে “বিপাশা ” নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন, এছাড়া ১৯০৪ সালে “মতিচুর প্রথম সংখ্যা এবং দ্বিতীয় সংখ্যা” রচনা করেন, এ ছাড়া ‘অবরোধ বাসিনী’ও লেকেন। ১৯০৫ সালে ইংরেজি রচনা ‘সুলতানা স্ক্রীম’ রচনা করেন। তারপর থেকে তিনি যখন সই করতেন R.S. Hossain নামে। অর্থাৎ রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নামে। দুর্ভাগ্য সাখাওয়াত হোসেন কঠিন রোগে ভুগতে থাকেন। স্বামীর সেবা করায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে সাখাওয়াত হোসেন রোকেয়ার হাতে ১০,০০০ টাকা তুলে দিলেন মুসলিম মহিলা স্কুল করার উদ্দেশ্যে। ১৯০৯ সালের ৩ রা মে, সাখাওয়াত হোসেন পরলোকগমন করেন। মাত্র ২৮ বছর বয়সের বেগম রোকেয়া বিধবা হয়ে নতুন নিঃসঙ্গ জীবন শুরু করেন। তারপর ঠিক পাঁচ মাস পর প্রথমে ভাগলপুরে ৫ জন মেয়েকে নিয়ে “সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল ” শুরু করেন কিন্তু শুশুরবাড়ির পরিবারের থেকে আঘাত পেয়ে ভাগলপুরে সবকিছু চুকিয়ে চলে আসেন কলকাতায়। তারপর ১৯১১ সালে ১৬ ই মার্চ কলকাতা তালতলা ১৩ নম্বর ওয়ালিল্লাহ লেনে নতুন করে একই নামে স্কুল শুরু করেন। সেই স্কুলের সম্বল, ২টি বেঞ্চ এবং ৮ জন ছাত্রী। তারপর ১৯১৬ সালে তিনি “মুসলিম মহিলা সমিতি ও আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম” নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি করলেন। সেই সংগঠনের লক্ষ্য ছিল স্ত্রী শিক্ষার বহুল প্রচার ও প্রসার এবং বাল্যবিবাহ রোধ সহ নানাবিধ কাজ। এই সংগঠনের মহিলারা স্বদেশী এবং খেলাফত আন্দোলনে সহযোগিতা করেছিলেন। এছাড়া বিধবাদের সাহায্য করাই মূল লক্ষ্য ছিল। তিনি বাঙালির থেকে বেশি ভারতীয় নারীর চিন্তা করেছিলেন ফলে এটা তাঁর বিস্ময়কর একটা বিষয়। ১৯৩২ সালে ১৭ নম্বর লর্ডস সিনহা রোডে স্কুল স্থাপিত হয়। বর্তমানে সেই স্কুলে শতাধিক ছাত্রী। বর্তমান স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হলেন শুক্লা রায়। বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বহু ছাত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছেন। তারাও আজ প্রতিষ্ঠিত। বেগম রোকেয়া, মৃত্যুর ৬ মাস আগে থেকে ভাত খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। ডাক্তার বলেছিলেন আপনাকে একটু বিশ্রাম নিতে হবে। তার উত্তরে বেগম রোকেয়া বলেছিলেন বিশ্রাম তো দূরের কথা আমার মরার অবসর নেই। কিছুদিন পর কলকাতার কায়জার স্ট্রিটে ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর বুওয়ালী কালান্দার মসজিদের নিকট জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।কলকাতা থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে সোদপুরে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। তিনি সর্বদা কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করে গিয়েছিলেন। এককথায় নারী আন্দোলনের অন্যতম উজ্জ্বল মুখ এবং নারীদের পূর্ণ স্বাধীনতার দিকে লক্ষ্য রেখে শিক্ষার জন্য যে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন আমরা তাঁর কুর্নিশ জানাই। বিশেষ করে আজ তাঁর শ্রদ্ধা নিবেদন করি এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি। আমার মনে হয় তাঁর সংগ্রামী জীবন, নারী শিক্ষার প্রতি যে আবদান, প্রয়াস যে প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন, আমরা এই প্রজন্মের ছাত্রীদের, মেয়েদের, সন্তানদের যদি বেগম রোকেয়ার মতো শিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজের নানাবিধ কাজকর্মে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা দিতে পারি তাহলে আজকের এই অনুষ্ঠান সার্থক হবে। সাজাহান মন্ডল বলেন, আজ যদি সরকারের পক্ষ থেকে অন্যান্য মনীষীদের মতো বেগম রোকেয়ার জন্ম দিনটি সাড়াম্বরে পালিত হলে আমরা খুশি হতাম। রোকেয়ার শিক্ষা, সাহিত্য সংস্কৃতির অবদান পাঠ্য পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক বলে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর