বিজেপি প্রীতি শেষ, মমতার দেওয়া চাকরি নেবে শীতলকুচিতে নিহত বিজেপি সমর্থকের পরিবার

নিউজ ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছেন শীতালকুচি কেন্দ্রের ৫ ভোটার। তাদের মধ্যে ৪ জন মুসলিম ভোট দিতে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। আরো একজন বিজেপি সমর্থক নিহত হন সেদিন। তার পর রাজনৈতিক চাপান-উতরে চলে গিয়েছে প্রায় একটা মাস। ঘটনার সম্পূর্ণ দায় রাজ্য পুলিশ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে বিজেপি সমর্থক এর পরিবার এর বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি করে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই পরিবারকে সাহায্য করতে চাইলে তারা সরাসরি তা অস্বীকার করে। তাদের পরিবার থেকে একজনকে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী, তা ও অস্বীকার করে বিজেপি সমর্থকের পরিবারটি। তাদের তরফ থেকে বলা হয় যদি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করে তাহলেই তারা চাকরি নেবে। কিন্তু নিজেদের দলের শোচনীয় পরাজয় দেখে বিজেপি প্রীতি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা। শেষমেশ সরকারি সাহায্য নিতে রাজি হল শীতলখুচিতে নিহত বিজেপি সমর্থক আনন্দ বর্মণের পরিবার।

 

 

আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি সরকারি চাকরি নিতে ও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তারা। শুক্রবার তৃণমূল নেতা পার্থপ্রতিম রায়ের পাশে বসে এমনটাই জানালেন নিহত ওই কিশোরের মা ও দাদা। প্রতিশ্রুতি মতো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবেন বলে আশাবাদী তাঁরা।
শুক্রবার শীতলখুচির তৃণমূল নেতা পার্থপ্রতিম রায়ের সঙ্গে দেখা করেন নিহত কিশোরের পরিবার। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই সাংবাদিক বৈঠক করেন পার্থপ্রতিম। সেখানে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার আনন্দের পরিবারকে বার্তা পাঠিয়েছিলেন তিনি। দেখা করতে চেয়েছিলেন। তাতে রাজি হন পরিবারের লোকজন। সেই মতো শুক্রবার সকালে আনন্দের মা বাসন্তী বর্মণ, দাদা গোবিন্দ বর্মণ এবং মামা জগদীশ রায় দেখা করেন। জানান, তাঁরা সরকারি সাহায্য নিতে রাজি।

 

এর আগে যদিও, আনন্দের পরিবার তৃণমূল সরকারের কাছ থেকে কোনও সাহায্যই নিতে রাজি হননি। সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে তবেই সাহায্য নেবেন। তাহলে কি চাপের মুখেই সে কথা বলেছিলেন তারা? শেষ পর্যন্ত ভয় কাটল কী করে? এই প্রশ্ন তুলতেই মাঝপথেই সাংবাদিকদের থামিয়ে দেন পার্থপ্রতিম। পুরনো প্রসঙ্গ তুলে লাভ নেই বলে জানিয়ে দেন তিনি।
তবে এ বার কী করবেন জানতে চাইলে, আনন্দের মা বলেন, ‘‘চাকরি নেব। ঘর করব। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দোষীদের শাস্তি চাইব।’’ আনন্দের দাদা গোবিন্দ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সবার মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি যদি ১০টা পরিবারকে চাকরি দেন, নিতে বাধা নেই। ভাইকে যারা মেরেছে, সেই দোষীদের শাস্তি হোক।’’
আনন্দের পরিবারের এই মত বদলে যদিও আপত্তি তুলছেন না স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। জেলা বিজেপি-র সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, তাদের পরিবারের অনেক বড়ো ক্ষতি হয়েছে যা অপূরণীয়। তবে এখন তারা একটু সাহায্য পেলে তাদের জীবনধারণে সুবিধা হবে। তবে আমরা দোষীদের শাস্তি দাবি করব।

 

গত ১০ এপ্রিল, চতুর্থ দফায় ভোটগ্রহণের সকালে প্রথমে শীতলখুচির পাঠানটুলির শালবাড়ির ২৮৫ নম্বর বুথে ভোট দিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ১৮ বছরের আনন্দের। তার পর গুলি চেল জোড়পাটকির ১২৬ নম্বর বুথেও। সেখানে মনিরুজ্জামান রহমান, সামিউল মিয়াঁ, সামিদুল মিয়াঁ এবং নুর আলম নামে চার যুবক নিহত হন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় ইতিমধ্যেই জোর তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য সি আই ডি এর স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম।

Latest articles

Related articles