
গত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে এশিয়ার কয়েকটি দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ফের উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। হংকং ও সিঙ্গাপুরে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে বেশ কিছু জরুরি সতর্কতা জারি করেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্বল অন্যাক্রমতাযুক্ত মানুষেরা এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবেই সহজেই ইনফেক্টেড হয়ে যাচ্ছে । হংকং ও সিঙ্গাপুর, দুই দেশের সঙ্গে ভারতের বেশ ভালো যোগাযোগ থাকায় এদেশেও সংক্রমণ ছড়ানোর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
হংকংয়ের প্রসাশনের প্রকাশিত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ৩রা মে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার গত এক বছরের মধ্যে শীর্ষে পৌঁছেছিল। “সেন্টার ফর হেলথ প্রোটেকশন”-এর সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যালবার্ট আউ সতর্ক করে বলেছেন, “ভাইরাসের সক্রিয়তা বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে। কোভিড পজিটিভ হওয়ার হারও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশী।” হংকং-এর প্রসিদ্ধ গায়ক ইয়াশন চ্যানের করোনা পজিটিভ হয়ে পড়ায় তার কনসার্ট বাতিল করা হয়েছে। হংকংয়ের ঘন জনবসতি ও সামাজিক যোগাযোগকে ওখানকার সংক্রমণ বৃদ্ধির মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
সিঙ্গাপুরে গত এক সপ্তাহে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৮% বেড়ে ১৪,২০০-এ দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যাও প্রায় ৩০% বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। যদিও সেখানকার সরকার এখনই নতুন কোরোনার ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী করছে না, তবে কোভিড সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীগুলোকে বুস্টার ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওখানকার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিডের টিকার প্রভাব কমে আসা ও বিশাল জনসমাগমই এই সংক্রমণের পিছনে মূল ভূমিকা পালন করছে।
থাইল্যান্ডে গত এপ্রিল মাসে একটি উৎসবের পর করোনার দুটি বড় বড় ক্লাস্টার দেখা গেছে। চীনের সিডিসি-র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে করোনা পজিটিভের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশেও ঠিক একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

হংকং ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক ও পর্যটন সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সংক্রমণ ছড়ানো নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনও নতুন নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। চিকিৎসক মহল এই বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত—একাংশ অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সতর্কতার পক্ষে সওয়াল করলেও অন্যরা বর্তমান পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণযোগ্য বলে মনে করছেন।
বিশ্বজুড়ে করোনার মহামারীর প্রকোপ কমলেও ভাইরাসটি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে ও টিকা ও বুস্টার গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে কোভিড প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও সচেতন থাকতে।