Monday, June 9, 2025
35 C
Kolkata

“মোদী-এবার গদি ছাড়ো” শিরোনামে এক মাস দেশ জুড়ে শ্রমিক বিক্ষোভ কর্মসূচীর সাংবাদিক সম্মেলন করল ‘ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নস’

এনবিটিভি ডেস্কঃ  ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নস (এফআইটিইউ) “মোদী-এবার গদি ছাড়ো” শিরোনামে এক মাস ব্যাপি সারা দেশ জুড়ে শ্রমিক বিক্ষোভ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী নেওয়া হয়। এই শ্রমিক বিক্ষোভ কর্মসূচী চলবে ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ।ট্রেড ইউনিয়নস আজ সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে রাজ্যে গৃহীত কর্মসূচী সূচনা করে । আজ এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নস-এর রাজ্য সভাপতি সেখ মোজাফফার,ট্রেড ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক মহিনুর জামান কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডাক্তার মানোয়ারা বেগম । এই সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, গোলাম রহমান জাঁতুয়া, ওয়েলফেয়ার পার্টির রাজ্য সম্পাদক জালাল উদ্দিন আহমেদ ও শাহাজাদী পারভীন সহ অন্যান্যরা।

মঙ্গলবার কলকাতায় ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নস সাংবাদিক সম্মেলনের পরেই এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।ঐ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এক মাস ব্যাপি সারা দেশ জুড়ে শ্রমিক বিক্ষোভ উপলক্ষে কি কি কর্মসূচী নেওয়া হবে তা বিস্তারিত বলা হয়েছে।

প্রচারাভিযানের নানান দাবিগুলো উল্লেখ করে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সমগ্র দেশের উন্নয়ন সর্পিল গতিতে নিম্নমুখী হয়েছে। যে বড় বড় প্রতিশ্রুতিগুলো তাকে ক্ষমতায় এনেছিল তা পূরণ করতে না পারার কারণে মোদি বর্তমানে একটি শোচনীয় পরিস্থিতিতে রয়েছেন । সরকার দেশকে ধীরে ধীরে কর্পোরেট হাউসের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে এবং পাবলিক সেক্টর কোম্পানিগুলোকে বেসরকারীকরণের একটা মাদকতা চলছে । নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে তারা মাঝে মাঝে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করছে । এমতবস্থায়, ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এবং ফ্যাসিবাদী বিজেপি শাসনের ব্যর্থতা সম্পর্কে তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য দেশব্যাপী একটি ব্যাপক প্রচারাভিযান শুরু করেছে ।

 এই প্রচারাভিযানের দাবিগুলো হলো-

 ১. শ্রমিকবিরোধী শ্রম আইন প্রত্যাহার করতে হবে:-

  এই আইনে কর্মচারীদের দৈনিক কাজের সময় ৯ ঘন্টা থেকে বাড়িয়ে ১২ ঘন্টা করা হচ্ছে।

  যে প্রতিষ্ঠানে একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন আছে সেখানে এই শ্রম আইন একমাত্র আলোচনার ইউনিয়নএর ধারা চালু করছে। এই শ্রম আইনের ১৪ নং ধারা অনুযায়ী ঐ ধরনের “একমাত্র মধ্যস্থতাকারী ইউনিয়ন”-এর তকমা পেতে গেলে উক্ত ইউনিয়নে সদস্য হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ৫১ শতাংশ বা তার বেশি সংখ্যক কর্মীদের নাম নথিভুক্ত থাকা প্রয়োজন। সেখানে আরও বলা হয়েছে যে, কাজের শর্তাদি নিয়ে নিয়োগকর্তার সাথে আলোচনা করার ক্ষেত্রে অনুমতি পাবে শুধুমাত্র ঐ একমাত্র মধ্যস্থতাকারী ইউনিয়ন

  সেই শ্রম আইনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি ধর্মঘটে যাওয়ার ৬০ দিন আগে বা নোটিশ জমা দেওয়ার ১৪ দিনের আগে বা মীমাংসা বা ট্রাইব্যুনালের কার্যধারার মুলতুবি থাকাকালীন ও কার্যধারার শেষ হওয়ার দিনের মধ্যে পূর্ব নোটিশ না দিয়ে চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য ধর্মঘট বা লক-আউটে যাবেন না।  .

  স্থায়ী আদেশের সীমারেখা এখন বাড়ানো হয়েছে এবং ৩০০ জন শ্রমিক সম্বলিত প্রতিষ্ঠানের জন্যই তা প্রযোজ্য হবে ৷

৩০০ জনের কম কর্মী সম্বলিত সংস্থাগুলির জন্য উদার হায়ার-এন্ড-ফায়ার (অস্থায়ী নিয়োগ আর ছাঁটাই) নিয়ম চালু থাকবে ৷

সরকার এই বিষয়টি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে যে, সম্পদের পুনর্বন্টন ছাড়াই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দেওয়ার ফলেই দেশ কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক দায়বদ্ধতাহীন সমৃদ্ধির দিকে পরিচালিত হচ্ছে । এই পরিস্থিতিই শ্রমিক এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়কে আরও দরিদ্র, নিরাপত্তাহীন এবং অর্থনৈতিক সংকট ও শ্রমবাজারের অস্পষ্টতার প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। এটা স্পষ্ট যে, এই সমস্যাগুলির সমাধান করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে আজ সমাজের শান্তি-সম্প্রীতি হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে এবং শ্রমিকদের জীবনযাত্রা ও কর্মক্ষেত্রের অবস্থার উন্নতি করার ক্ষেত্রে দেশের সামর্থ্য ক্ষুণ্ন হয়েছে ।  ক্রমাগত কোটি কোটি শ্রমিককে তাদের মৌলিক অধিকার ও স্বীকৃত পাওনা থেকে বঞ্চিত করা কেবল সংবিধানবিরোধী ও দেশবিরোধীই নয়, দীর্ঘমেয়াদে আমাদের প্রবৃদ্ধি মডেলের টেকসইতার জন্যও গুরুতর তাৎপর্যবাহী ।

২. পেট্রোলিয়াম পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং পেট্রোপণ্যের উপর কর হ্রাস করতে হবে:-

  ডিজেলের জন্য ২০১৪ সালের এবং পেট্রোলের জন্য ২০১০ সালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করতে হবে।

পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কমাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উচিত তাদের কর কমানো।

পেট্রোলিয়াম পণ্যের উপর বিশ্বে ভারত হল সর্বোচ্চ কর সংগ্রাহক।

৩. রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি পুনর্বহাল করতে হবে:-

কেন্দ্রীয় সরকার ২০২০ সালের মে মাস থেকে সমস্ত ভর্তুকি বন্ধ করে দিয়েছে।

জানুয়ারী ২০১৫ এর গ্যাস ভর্তুকি পুনর্বহাল করতে হবে।

রান্নার গ্যাসের জন্য ডিবিটিএল-প্রকল্প বাতিল করতে হবে।

রান্নার গ্যাসের উপর রাজ্য সরকারের ট্যাক্স কমাতে হবে (বর্তমানে যা ৫৫ শতাংশ) ।

 ৪. সরকার অধিকৃত পাবলিক সেক্টর প্রতিষ্ঠানগুলির বিক্রি বন্ধ করতে হবে:-

ভারত বর্তমানে এমন একটি দেশে পরিণত হয়েছে যার নিজস্ব কোনও এয়ারলাইন্স নেই ।

  কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করে যে, সরকার অধিকৃত পাবলিক সেক্টরগুলি ক্ষতির মধ্যে রয়েছে ৷কিন্তু অনেক সরকার অধিকৃত পাবলিক সেক্টরগুলিই (পি.এস.ইউ) লাভজনকভাবে চলছে । হয়তো কিছু পিএসইউসংকটের সম্মুখীন হয়ে থাকতে পারে । তাই সরকারকে অবশ্যই এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান বিক্রি বন্ধ করতে হবে এবং পিএসইউপ্রতিষ্ঠানগুলির সমস্যাগুলি সমাধান করা শুরু করতে হবে ।

সরকারি সম্পদগুলিকে একে একে ব্যক্তিগত মালিকানার হাতে উৎসর্গ করে দিলে দেশের মধ্যে সম্পদের বৈষম্য আরও তীব্র আকার নেবে ।

সরকার অধিকৃত পাবলিক সেক্টর সম্পত্তি নিলাম করার অর্থ হল, সরকারী দায়বদ্ধতা বেসরকারী মালিকানার কাঁধে অর্পণ করা ৷

এটা কেবলমাত্র এই প্রদর্শিত করে যে, সরকার পরিষেবা ক্ষেত্রে নিজের হাত গুটিয়ে নিচ্ছে ।

 

                  ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের প্রচারে বিজেপি বলেছিল যে, তারা ক্ষমতায় এলে প্রতি বছর ২ কোটি লোকের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করবে । কিন্তু, ক্ষমতায় আসার পর সেই প্রতিশ্রুতিগুলোও নির্বাচনী বাগড়ম্বরে পর্যবসিত হয় ।প্রকৃতপক্ষে, তারা প্রতি বছর ২০ লাখ লোকের জন্যও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়নি । শুধু তাই নয়, বেকারত্বে বর্তমানে ভারত ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে । ভারতে বর্তমানে বেকারত্ব প্রতি বছর গড়ে ৯.১ হারে বেড়েছে । নোটবন্দী, অনিয়ন্ত্রিত জি.এস.টি. লাগু করা এবং করোনা লকডাউনের কারণে অনেক কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে । কাজ হারাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ । এই সংখ্যাটা দিন দিন বাড়ছে ।ভারতের বর্তমান অবস্থা এমন যে, ফোর্ডের মতো সমস্ত বড় বিদেশী কোম্পানিরা ভারত ছেড়ে চলে যাচ্ছে । মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের মেয়াদ যদি আরও বৃদ্ধি হয়, তাহলে দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা বহুগুণ বাড়বে, কোনও মতেই কমবে না । তাই, ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন দেশব্যাপি শ্রমজীবী মানুষের হয়ে জোরালো আওয়াজ তুলেছে– “মোদী – এবার গদি ছাড়ো “

 

মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ব্যাক্তিবর্গ খুবই আশাবাদী যে, শ্রমিক শ্রেণীর উন্নতি কল্পে তাঁদের গৃহীত কর্মসূচীগুলো সফল ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাবে। তার সাথে সরকারের টনকও নড়বে বলে মনে করেন। 

Hot this week

গাজার রাফাহ সহায়তা কেন্দ্রেই মৃত্যু: ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৭ জন ফিলিস্তিনি

ফের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় রাফাহ শহরের একটি...

মাদ্রাসা রক্ষায় আজমগড়ে সম্মেলন, আদালতের পথে জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দ

উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে আয়োজিত হয় একটি মাদ্রাসা রক্ষা সম্মেলন...

ঈদের আগে উত্তেজনা: গাজিয়াবাদে মুসলিম মাংস বিক্রেতাকে গুলি করার হুমকি বিজেপি বিধায়ক নন্দ কিশোর গুর্জর

উত্তরপ্রদেশর গাজিয়াবাদে বিজেপি বিধায়ক নন্দ কিশোর গুর্জর সম্প্রতি একটি...

টাকার পরিমান দেখে চোখ ধাঁধিয়ে গেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার, গ্রেপ্তার ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস অফিসার

চোখ ধাঁধানো গুপ্তধনের সন্ধান। ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস অফিসার অমিত...

Topics

গাজার রাফাহ সহায়তা কেন্দ্রেই মৃত্যু: ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৭ জন ফিলিস্তিনি

ফের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় রাফাহ শহরের একটি...

মাদ্রাসা রক্ষায় আজমগড়ে সম্মেলন, আদালতের পথে জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দ

উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে আয়োজিত হয় একটি মাদ্রাসা রক্ষা সম্মেলন...

গাজায় ফের ইসরায়েলি হামলা!ধ্বংস করা হল ২৪০টির বেশি ঘর, নিহত হাজার হাজার নিরীহ মানুষ

গত অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ হামলা চালিয়ে আসছে।...

Related Articles

Popular Categories