ফেব্রুয়ারীতে উত্তর পূর্ব দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য দায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রকাশ সিপিআইএম এর সত্য সন্ধানী রিপোর্টে

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

_111078706__111063411_gettyimages-1203425532

সাইফুল্লা লস্কর : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ থেকে শুরু হওয়া উত্তর-পূর্ব দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পিছনে মদত ছিল অমিত শাহের অধীনে থাকা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এবং পুলিশ এই দাঙ্গার নিরপেক্ষ করেনি। এক বিশেষ পক্ষকে নিশানা করে পুলিশ তদন্ত চালানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ইঙ্গিতে, এমনই দাবি করা হয়েছে বুধবার প্রকাশিত সিপিআইএম-এর সত্য সন্ধানী রিপোর্টে। ফেব্রুয়ারির এই ভয়ংকরতম দাঙ্গায় ৫৩ জন মানুষের মৃত্যু হয় যার মধ্যে ৪০ জন মুসলিম এবং ১৩ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ছিল। এই দাঙ্গায় অসংখ্য মানুষ তাদের নিজ গৃহ এবং তাদের এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয় যাদের মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম সম্প্রদায়ের।

আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের সময় সংঘটিত হওয়া এই তথাকথিত দাঙ্গার দোষী হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা পুলিশ তড়িঘড়ি খালিদ সাইফি, ইসরাত জাহান এদের মত মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেক সমাজকর্মী লেখক সাংবাদিক এবং রাজনীতিবিদ কে গ্রেপ্তার করে।এছাড়াও পরবর্তীতে গ্রেপ্তার করা হয় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ছাত্র নেতাদের। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে পুলিশের দ্বারা।

রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে আদতে তথাকথিত দিল্লি দাঙ্গা একটি দাঙ্গা ছিলনা কারণ দাঙ্গা এমন একটি ঘটনাকে বলা হয় যেখানে দুই পক্ষই সমানভাবে দায়ী থাকে এবং সমানভাবে অংশগ্রহণ করে কিন্তু দিল্লি দাঙ্গা সম্পূর্ণরূপে পূর্বপরিকল্পিত একপাক্ষিক হিংসা এবং হত্যাকাণ্ড ছিল। হিন্দুত্ববাদী জনতা পরিকল্পিতভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বহু ভিডিওতে দেখা যায় দিল্লি পুলিশ দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেনি বরং অনেক ক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদী জনতাকে সাহায্য করেছে।মুসলিম এলাকাগুলিতে মুসলিমদের বাড়িঘর এমনকি মুসলিম ধর্মীয় স্থাপনা গুলি রক্ষা করার জন্য দিল্লি পুলিশ কোনরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

“উত্তর পূর্ব দিল্লির সাম্প্রদায়িক হিংসা, ফেব্রুয়ারি ২০২০” শীর্ষক এই রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়েছে ২৩ শে ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংঘটিত হওয়া এই দাঙ্গায় দিল্লি পুলিশ মাত্র ১৩০০ থেকে ২৪০০ জন পুলিশ মোতায়ন করেছিল, দাঙ্গাপীড়িত একটি জেলায় যার জনসংখ্যা ছিল ২৬ লক্ষ।কেন এত কম সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল দাঙ্গার সময়? প্রশ্ন ওঠে যদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আদতে সচেষ্ট হয়ে থাকতো তাহলে কেন দাঙ্গা শুরু হবার পরেই দাঙ্গাপীড়িত এলাকাগুলিতে কারফিউ মোতায়ন করা হয়নি কেনই বা সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়নি? তার ওপর দাঙ্গার সময় পুলিশের মতায়ন সব ক্ষেত্রে দেরীতে হয়েছিল।

দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে দিল্লির আপ সরকার ও তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি এমনকি দাঙ্গাপীড়িত মানুষদের কোনরকম সাহায্য করার ব্যবস্থা করেনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দাঙ্গার ব্যাপারে কোনো রকম যথাযথ তদন্ত শুরু না করেই মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে লোকসভায় কংগ্রেস নেতাদের এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সমাজকর্মীদের এই দাঙ্গার জন্য দোষারোপ করে এবং দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়া দিল্লি পুলিসের ভূয়শী প্রশংসা করে।

বেশিরভাগ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দ্বারা দাবি করা হয় যে দাঙ্গার আগে কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর দের মত বিজেপি নেতাদের সাম্প্রদায়িক মনোভাবপূর্ণ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি করা বিরূপ সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের কারণে উত্তর-পূর্ব দিল্লির দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু এই দুই বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশ কোন ব্যাবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা তাদের বিরুদ্ধে কোনো এফআইআর পর্যন্ত দায়ের করেনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক দাঙ্গার পূর্বে বিজেপি নেতাদের করা বিতর্কিত সমস্ত সাম্প্রদায়িক মন্তব্য বাতিল করে দেয়।

দিল্লি দাঙ্গার শুনানি চলার সময়ে পাতিয়ালার সেশন কোর্টে এক বিচারক দিল্লি পুলিশকে একপাক্ষিক তদন্ত করার জন্য ভর্ৎসনা করে এই দাঙ্গার ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্ত করার হুকুম জারি করেন। সেশন কোর্টের বিচারক সুস্পষ্টভাবে বলেন, তদন্তের প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে পুলিশ এক নির্দিষ্ট পক্ষকে নিশানা করে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর