Monday, June 9, 2025
30 C
Kolkata

জেরুজালেমে ফিলিস্তিনির বাড়ি গুড়িয়ে দিল বর্বর ইসরাইল

অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পূর্ব জেরুসালেমে এক ফিলিস্তিনি পরিবারের বাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী।বুধবার ভোরে পূর্ব জেরুসালেমের শেখ জাররাহ মহল্লায় আল-সালহিয়া পরিবারের এই বাড়িটি ইসরাইলি বাহিনী গুড়িয়ে দেয়।এর আগে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের বাড়িটি গুড়িয়ে দেয়ার আশঙ্কায় সোমবার ওই পরিবারটি তাদের বাড়ি আটকিয়ে তা আগুনে জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলো।আল-সালহিয়া পরিবারের সদস্যরা সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে জানান, বুধবার ভোর ৩টায় বিপুল পরিমাণে ইসরাইলি পুলিশ ও বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে। পরিবারের সকল সদস্য ঘুমে থাকার সময় বিপুল অস্ত্রসজ্জ্বিত হয়ে ইসরাইলি বাহিনী বাড়িতে অনুপ্রবেশ করে ও বাড়ির বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালায়। এই সময় তারা বাড়ির প্রধান মাহমুদ আল-সালহিয়াসহ মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করে। এই সময় ওই বাড়িতে আরো ১৮ ফিলিস্তিনি বাসিন্দা অবস্থান করছিলো। তীব্র শীতের মধ্যে ভোর ৫টায় ফজরের আজানের সময় বাড়ি ভাঙ্গার কাজ শুরু হয়। ওই ১৮ ফিলিস্তিনি বাসিন্দা বর্তমানে আশ্রয়হীন অবস্থায় রয়েছেন।ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মহল্লার বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্দেশ্যেই তারা এই বাড়িটি গুড়িয়ে দিয়েছে।আল-সালহিয়া পরিবারের সদস্য ইয়াসমিন আল-সালহিয়া জানান, ইসরাইলি বাহিনী তাদের বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং বাড়ির ভেতরে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে।আলজাজিরাকে তিনি বলেন, ৫০ জনের মতো পুলিশ সদস্য তাদের বাড়িতে অনুপ্রবেশ করে এবং পরিবারের সদস্যদের মারধর করে। পরিবারের মহিলা সদস্যরাও তাদের আক্রমণের শিকার হয় বলে জানান তিনি।তিনি বলেন, ‘তারা আমার ভাই ও চাচাত ভাইদের সাথে আমার বাবাকেও বিছানা থেকে টেনে তোলে। পোশাক পরার কোনো সুযোগ না দিয়েই তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়।’খবর শুনে ঘটনাস্থলে পৌঁছার চেষ্টা করা অধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের ইসরাইলি বাহিনী রাবার মোড়ানো বুলেট নিক্ষেপ করে বলে জানান তিনি।এদিকে ফিলিস্তিনি এই পরিবারটির বাড়ি অধিগ্রহণ নিয়ে ইসরাইলি আদালতে এক মামলা চলমান রয়েছে। মামলায় শুনানির জেরে চূড়ান্ত রায়ের জন্য আগামী ২৩ জানুয়ারি তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার জেরে অধিকৃত বিভিন্ন ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের সময় আল-সালহিয়া পরিবারও উদ্বাস্তু হয়ে আসে। ওই সময় ইসরাইলের অধিকৃত পশ্চিম জেরুসালেমের আইন কারিম গ্রাম থেকে উচ্ছেদ হয়ে তারা জর্দানের নিয়ন্ত্রণাধীন পূর্ব জেরুসালেমে আশ্রয় নেয়। পরে জর্দান সরকারের আবাসন ব্যবস্থাপনায় ১৯৫৬ সালে তারা শেখ জাররাহ মহল্লায় নিজস্ব বাড়ি পায়। ইসরাইলের অধিকৃত ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের এই ঘটনা ইতিহাসে নাকবা (বিপর্যয়) নামে পরিচিত। ইসরাইলি প্রতিষ্ঠার জন্য এই ঘটনায় প্রায় সাত লাখ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি বাসিন্দাকে নিজেদের আবাস ছাড়তে বাধ্য করা হয়।১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর জেরুসালেম শহরের পশ্চিম অংশ দখল করে নেয় ইসরাইলি বাহিনী। পরে ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর মসজিদুল আকসাসহ পূর্ব জেরুসালেম ইসরাইল দখল করে নেয়। আন্তর্জাতিক আইনে অধিকৃত ভূমি হিসেবে বিবেচিত হলেও ১৯৮০ সালে ইসরাইল শহরটিকে একীভূত করে নেয় এবং অখণ্ড জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে। বিভিন্ন সময় শহরটিতে থাকা ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে ইসরাইলি ইহুদিদের শহরে আবাসনের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ।

সূত্র : নয়া দিগন্ত

Hot this week

গাজার রাফাহ সহায়তা কেন্দ্রেই মৃত্যু: ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৭ জন ফিলিস্তিনি

ফের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় রাফাহ শহরের একটি...

মাদ্রাসা রক্ষায় আজমগড়ে সম্মেলন, আদালতের পথে জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দ

উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে আয়োজিত হয় একটি মাদ্রাসা রক্ষা সম্মেলন...

ঈদের আগে উত্তেজনা: গাজিয়াবাদে মুসলিম মাংস বিক্রেতাকে গুলি করার হুমকি বিজেপি বিধায়ক নন্দ কিশোর গুর্জর

উত্তরপ্রদেশর গাজিয়াবাদে বিজেপি বিধায়ক নন্দ কিশোর গুর্জর সম্প্রতি একটি...

টাকার পরিমান দেখে চোখ ধাঁধিয়ে গেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার, গ্রেপ্তার ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস অফিসার

চোখ ধাঁধানো গুপ্তধনের সন্ধান। ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস অফিসার অমিত...

Topics

গাজার রাফাহ সহায়তা কেন্দ্রেই মৃত্যু: ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৭ জন ফিলিস্তিনি

ফের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় রাফাহ শহরের একটি...

মাদ্রাসা রক্ষায় আজমগড়ে সম্মেলন, আদালতের পথে জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দ

উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে আয়োজিত হয় একটি মাদ্রাসা রক্ষা সম্মেলন...

গাজায় ফের ইসরায়েলি হামলা!ধ্বংস করা হল ২৪০টির বেশি ঘর, নিহত হাজার হাজার নিরীহ মানুষ

গত অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ হামলা চালিয়ে আসছে।...

Related Articles

Popular Categories