হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের চিন্তাভাবনা ছেড়ে মানবিক হোন, তাতেই রয়েছে কল্যাণ

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

1-20

~ঝুমুর রায়

হিন্দুরাষ্ট্র গঠন করতে চাচ্ছেন! আচ্ছা হিন্দুরাষ্ট্র আপনি কীভাবে গঠন করবেন? হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের মূল উদ্দেশ্য কী? হিন্দুরাষ্ট্র গঠন কি মুসলমানদের তাড়িয়ে দিয়ে করতে চান? দেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল তাদের একটা ইচ্ছা প্রকাশ করল যে, এ দেশ থেকে মুসলমানদের তাড়াতে হবে নয়তো হিন্দুরাষ্ট্র গঠন করা যাবে না। মুসলিমরা হিন্দুরাষ্ট্র গঠনে বাধা দিচ্ছে— এমন ইচ্ছার কথা তাঁরা তাঁদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রতিটি মুহূর্তে। হিন্দুত্ববাদী এবং উচ্চশিক্ষিত হিন্দুদের সিংহভাগ প্রচার করেন যে হিন্দু ধর্ম মানবতার শিক্ষা দেয়,মানবিক হতে শেখায়! তাঁরা মনে হয় মানবতার ডেফিনেশন ঠিক জানেন না। মানবতার সঙ্গে তাঁদের হয়তো দেখাও হয়নি কস্মিনকালে। মুসলিম বিদ্বেষমূলক আচরণের মাধ্যমে তাঁরা কোন মানবতাকে খুঁজে পেলেন তা খুব একটা বোধগম্য হয় না। স্বাধীন ভারতে একজন মুসলিম নাগরিক হাতে ‘৭৮৬’ লেখা ট্যাটু করালে তার হাত কেটে নেয় হিন্দুত্ববাদীরা। এটা কেমন ধরনের নৃশংসতা! মুসলমান যুবক মন্দিরের জল পান করলে তাকে মারধর করা হয়। এগুলো বুঝি হিন্দুত্ববাদের নমুনা? আজানের সময় হনুমান চালিশা বাজানো হিন্দুশাস্ত্রের বিধান বুঝি? ইতিহাস বিকৃত করে মুসলমানদের শত্রু হিসেবে জনগণের সামনে তুলে ধরা মানবতার কত নম্বর ধারার মধ্যে পড়ে! আইনি স্বীকৃতির মাধ্যমে হিজাবকে নিষিদ্ধ করা বুঝি হিন্দুত্বের জয়ের স্বীকৃতি? মন্দির ছেড়ে মসজিদে মসজিদে শিবলিঙ্গ খোঁজটা বুঝি মানবতা নিদর্শন! আপনি হিন্দু ধর্মকে এমন একটি রূপ দান করুন যেখানে কোনো জাতপাত থাকবে না, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকবে না। যেখানে থাকবে শুধু মানবতার জয়গান। তবেই না ভিন্ন ধর্মের লোকেরা মানবতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে হিন্দু ধর্মকে ভালোবাসবে, হিন্দু ধর্মে ভিড় জমাবে! হিন্দু ধর্মের কুসংস্কারগুলি দূর করে একটি মানবিক ও কুসংস্কারমুক্ত ধর্মে রূপ দান করুন। মনের মধ্যে থেকে মুসলিম বিদ্বেষের বীজকে সমূলে উৎখাত করুন।দেখবেন, হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের জন্য তখন মুসলমানদের তাড়াতে হবে না। উল্টে মুসলিমরাই আপনাকে সমর্থন করবে। আপনি স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল বা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ুন বেশি বেশি করে। দেশ থেকে বেকারত্ব দূর করুন, শিক্ষার মান উন্নয়ন করুন, চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিন, সর্বোপরি দেশকে দারিদ্রমুক্ত করুন, পুঁজিবাদকে ধ্বংস করুন। এই কাজগুলি করার পরে দেশ হবে উন্নত এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ। মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। তখন আপনি হিন্দুরাষ্ট্র কেন, যে কোনো রাষ্ট্র গঠন করতে পারবেন। কোনো বাধা থাকবে না। তখন দেশটা হিন্দুরাষ্ট্র, বৌদ্ধরাষ্ট্র, খ্রিস্টানরাষ্ট্র নাকি মুসলিমরাষ্ট্র হল, তা নিয়ে জনগণ বিশেষ মাথা ঘামাবে না। হিন্দুর ছেলে অচিন্ত্য তার কিডনির জন্য হিন্দুদের কাছে হাত পেতেছিল। কোনো হিন্দু কিন্তু সেইসময় তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেনি। এসেছিল কে? এক মুসলিম যুবক হাসলু মুহাম্মদ। সে শুধু এগিয়েই আসেনি, বিনামূল্যে দান করেছে তার একটি মূল্যবান কিডনি। এই হচ্ছে আমার ভারতবর্ষ। যে ভারতবর্ষ আমাদের পারস্পরিক সহাবস্থানের পাঠ দেয়। হিন্দু-মুসলিম বিভেদকে ঘৃণা করতে শেখায়। অচিন্ত্য-হাসলু মুহাম্মদের ঘটনাটি বিভিন্ন পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিল। সেই সময় যদি কোনো হিন্দু অচিন্ত্যকে কিডনি দান করত তাহলে হিন্দুদের মানবতা প্রকাশ পেত। হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের পথ সহজ হত। অনেকেই বলবেন এটা একটা সামান্য বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু এরকম অসংখ্য সামান্য ঘটনা মিলিত হয়েই তো বৃহত্তর পথ রচনা করে। যেমন গৃহযুদ্ধ থেকেই সৃষ্টি হয় বিশ্বযুদ্ধের। আবার বিন্দু বিন্দু জলরাশি গড়ে তোলে মহাসমুদ্র। একক ছাড়া পৃথিবীতে কোনোকিছু সৃষ্টি হতে পারে না।

একটা সময় বা এখনও অনেক জায়গায় জাতপাতের কারণে তথাকথিত নিচুশ্রেণির হিন্দু এবং মুসলমানরা স্কুল কলেজে পড়ার সুযোগ পেত না বা পায় না। ভারতে সর্বপ্রথম সেই সুযোগটি তৈরি করে দেন হাজী মহাম্মদ মহসিন। বাবাসাহেব ড. আম্বেদকরজী সেই কাজকে আরও ত্বরান্বিত করেন। এই কাজটি যদি হাজী মহাম্মদ মহসিনের পরিবর্তে কোনো হিন্দু সহৃদয় ব্যক্তি করে দেখাতেন তাহলে আজ ভারতবর্ষ স্বয়ংক্রিয়ভাবেই হিন্দুরাষ্ট্রে রূপান্তরিত হত। তার জন্য বলপূর্বক কিছু করতে হত না। এই প্রসঙ্গে একটা বিষয় উল্লেখের প্রয়োজন অনুভব করছি। তা হল ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট হিন্দু ধর্মকে অস্বীকার করে রায় দিয়েছে, হিন্দু কোনো ধর্মই নয়। এটা একটা সংস্কৃতি মাত্র। ফলে হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের চিন্তাভাবনা যাঁরা করছেন, প্রকারান্তরে তাঁরা আইন-বিরোধী কাজ করছেন বা সেই কাজে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। তাই আপনি যদি ভালো কাজ করেন, যদি মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ান, যদি মানবতার পরিচয় দেন, যদি সাম্যনীতি নিয়ে চলেন, যদি মানুষে মানুষে ভেদাভেদ না করেন, তাহলে আপনাকে সকলেই অনুসরণ করবে। অনুসরণ করবে আপনার আদর্শকে, অনুসরণ করবে আপনি এই আদর্শ কোথায় পেলেন সেই উৎসকে। আর সেই উৎস যদি আপনার ধর্ম হয় তবে মানুষ সেই ধর্মকেই শ্রদ্ধা করবে। সেটা হতে পারে হিন্দুধর্ম, ইসলামধর্ম, বৌদ্ধধর্ম ,খ্রিস্টান ধর্ম বা অন্য যে কোনো ধর্ম। সুতরাং আগে জাতব্যবস্থা নির্মূল করুন এবং মানবিক হোন। পরে চিন্তা করুন হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর